মুশফিকের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেল আগের ম্যাচেই গড়া সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। লিটন কুমার দাস রানে ফিরলেন, নাজমুল হোসেন শান্তও রান পেলেন। অভিষেকের মুগ্ধতার রেশকে বাড়িয়ে নিলেন তৌহিদ হৃদয় কিন্তু জয় ধরা দিল না প্রকৃতির বৈরিতায়। দ্বিতীয় ওয়ানডে পরিত্যক্ত, সিরিজ জয় তোলা শেষ ম্যাচের জন্য।
আগের ম্যাচে ৩৩৮ রান তুলে ১৮৩ রানের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার রান পৌঁছে গেল নতুন উচ্চতায়। ৫০ ওভারে ৩৪৯।
৭ ইনিংস পর পাওয়া ফিফটিতে লিটন দাস ওপেনিংয়ে করেন ৭১ বলে ৭০, তিনে নেমে শান্ত ৭৭ বলে ৭৩। অভিষেকে ৯২ রানের ইনিংসের পর আরেকবার নিজেকে মেলে ধরে হৃদয় করেন ৩৪ বলে ৪৯।
তবে ইনিংসের ৩৩ ওভার জুড়ে ২২ গজেই নামতে পারেননি যিনি, সেই মুশফিকই শেষ পর্যন্ত কেড়ে নেন সবটুকু আলো। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই যে ঝড়ের শুরু, পরে তা রূপ নেয় টর্নোডেতে। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে শতরান পূরণ করেন তিনি ৬০ বলে।
বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডে সাকিব আল হাসানের ৬৩ বলের সেঞ্চুরি দুইয়ে নেমে যায় প্রায় ১৪ বছর পর।
তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে পঞ্চম জুটিতে তিনি ১২৮ রান যোগ করেন স্রেফ ৭৮ বলে। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুতগতির শতরানের জুটি এটিই।
মুশফিকের বিধ্বংসী সেঞ্চুরি আর রান উৎসবের পর বৃষ্টিতে ভেসে গেল জয়ের আশা
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল ধীরলয়ের। পারিপার্শ্বিকতার দাবিও ছিল তেমনই। মেঘলা আকাশের নিচে টস জিতে আবারও বোলিং নেন আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি। উইকেটে সবুজ ঘাসের ছোঁয়া। নতুন বলে মার্ক অ্যাডায়ার ও গ্রাহাম হিউম কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে সুইং আদায় করে নেন দারুণভাবে। তামিম ইকবাল ও লিটন দাস সাবধানী ব্যাটিংয়ে সময়টা পার করেন। প্রথম ৪ ওভারে রান আসে ৫।
ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি আসে পঞ্চম ওভারে, যদিও সেই শট ঠিকমতো খেলতে পারেননি তামিম। ৬ ওভারের পর খোলস ছেড়ে বের হতে থাকেন দুই ওপেনারই। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে অ্যাডায়ারকে চার মারেন তামিম। লিটনের রান তখন ২২ বলে ৬। পরের ওভারে হিউমকে পরপর দুই বলে চার-ছক্কা মারেন তিনি।
জুটি যখন জমে ওঠার ইঙ্গিত, তখনই তামিমের আত্মহত্যা। অসম্ভব এক রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক (৩১ বলে ২৩)।
এই ইনিংসের পথে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রান পেরিয়ে যান তিনি।
জুটি থামে ৪২ রানে। এই নিয়ে টানা ৯ ওয়ানডেতে শুরুর জুটিতে ফিফটি পেল না বাংলাদেশ।
পরের জুটিতে রানের গতি যেমন বাড়ে, তেমনি সেই জুটি ফিফটি স্পর্শ করে শতরানের সীমানা। ততক্ষণে রোদ উঠে গেছে, উইকেট কিছুটা সহজ হয়ে এসেছে। শুরুর অস্বস্তি ঝেড়ে ফেলে লিটন তখন খুঁজে পেয়েছেন ছন্দ। নাজমুল হোসেন শান্তও ছুটতে থাকেন সমান তালে।
অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার ম্যাথু হামফ্রেজকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে লিটন পৌঁছে যান ফিফটির কাছে। পরের ওভারে হামফ্রেজকেই ছক্কায় একই সঙ্গে পূরণ করেন ফিফটি ও ২ হাজার রান।
৬৫ ইনিংসে ২ হাজার ছুঁয়ে তিনি স্পর্শ করেন বাংলাদেশের হয়ে শাহরিয়ার নাফীসের রেকর্ড।
শান্তর ফিফটি আসে ৫৯ বলে।
দুজনের সামনেই ছিল ইনিংস আরও বড় করার হাতছানি। কিন্তু পারেননি কেউই।
৯৬ বলে ১০১ রানের জুটি ভাঙে আলগা শটে লিটনের বিদায়ে। লেগ-মিডলে থাকা কার্টিস ক্যাম্পারের লেংথ বল আলতো করে শর্ট মিড উইকেটে তুলে দেন তিনি।
শান্তর বিদায়ের ধরনও ছিল হতাশাজনক। গ্রাহাম হিউমের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে আলতো করে গ্লাভস ছুঁইয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি।
হিউসের পরের ওভারেই স্লগ করতে গিয়ে সাকিবের ইনিংস থামে ১৯ বলে ১৭ করে।
সেখান থেকেই মুশফিক আর হৃদয়ের বিধ্বংসী বন্ধন। উইকেটে যাওয়ার পরপরই হামফ্রেজের ওভারে তিনটি চার মারেন দুজন মিলেন। কার্টিস ক্যাম্পারের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দৃষ্টিনন্দন ইনসাইড শটে ছক্কা মারেন মুশফিক। সময়ের সঙ্গে দুজন হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য।
মুশফিকের বিধ্বংসী সেঞ্চুরি আর রান উৎসবের পর বৃষ্টিতে ভেসে গেল জয়ের আশা
একটা সময় পর্যন্ত দুজন এগোচ্ছিলেন পাশাপাশিই। ৪২ ওভার শেষে হৃদয়ের রান ছিল ২৫ বলে ৩৪, মুশফিকের ২৯ বলে ৩৬।
পরের ওভারে অ্যাডায়ারকে টানা তিন বলে দুই চার ও এক ছক্কায় মুশফিক ফিফটিতে পৌঁছে যান ৩৩ বলে। এরপর হৃদয়কে ছাড়িয়ে তিনি এগিয়ে যান দুর্দান্ত সব শটের পসরা সাজিয়ে। ক্যাম্পারের ওভারে চার মারেন তিনটি।
এর মধ্যেই বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পূর্ণ করেন ৭ হাজার ওয়ানডে রান।
হৃদয়ের সামনে হাতছানি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম দুই ম্যাচেই ফিফটি করার। কিন্তু আউট হয়ে যান তিনি ৩৪ বলে ৪৯ রান করে।
মুশফিককে থামানো যায়নি। শেষ ওভার শুরু করেন তিনি ৯১ রান নিয়ে। স্ট্রাইকে ছিলেন যদিও ইয়াসির আলি। প্রথম বলে তিনি আউট হয়ে যান। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তাসকিন আহমেদ স্ট্রাইক দেন মুশফিককে। দুটি ডাবল আসে তার ব্যাট থেকে, এর মাঝে এক ডেলিভারিতে চার মারেন রিভার্স স্কুপে। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে পূরণ করেন সেঞ্চুরি। মেতে ওঠেন খ্যাপাটে উদযাপনে।
শেষ ১৫ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১৫৩ রান। শেষ ১০ ওভারে ১০৮।
২২ গজে সেই ঝড় শেষ হতেই শুরু হয় বৃষ্টি। ভেসে যায় ম্যাচের বাকি সব উত্তেজনাও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৪৯/৬ (তামিম ২৩, লিটন ৭০, শান্ত ৭৩, সাকিব ১৭, হৃদয় ৪৯, মুশফিক ১০০*, ইয়াসির ৭, তাসকিন ১*; অ্যাডায়ার ১০-১-৬০-১, হিউম ১০-২-৫৮-৩, ক্যাম্পার ১০-০-৭৩-১, হামফ্রেজ ৭-০-৫৯-০, ম্যাকব্রাইন ৯-০-৬৮-০, টেক্টর ৪-০-২৮-০)।
ফল: ম্যাচ পরিত্যক্ত।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।