চট্টগ্রামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়িয়েছে বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে ভুলতে বসা সিরিজ হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছে টানা দুই ম্যাচে। তাতে প্রায় ৯ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতে কোনো সিরিজের সব ম্যাচে হারের শঙ্কায় পড়ে যায় তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানের দল।
হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে আজ সোমবার (৬ মার্চ) তৃতীয় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম নগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হয় বেলা ১২টায়।
দেশের মাটিতে সবশেষ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের সবকটি ওয়ানডে হেরেছিল বাংলাদেশ।
সিরিজে টানা তৃতীয়বার টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে নিয়েছিলেন ব্যাটিং, পরের ম্যাচে ফিল্ডিং। এবার আবার ব্যাটিংয়ে ফিরে যান তিনি তামিম। এর কারণও জানান।
তিনি বলেন, “উইকেট একটু শুষ্ক মনে হচ্ছে। সাধারণত চট্টগ্রামের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো থাকে। আজকেও ভালো হবে বলে আশা করছি। পরের দিকে কিছুটা স্পিন ধরতে পারে।”
অপরদিকে, ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার জানিয়েছিলেন, টস জিতলে ফিল্ডিংই নিতেন তারা।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আজ ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। চট্টগ্রাম নগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ শুরুতে ব্যাট করে ৪৮.৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান সংগ্রহ করেছিল স্বাগতিকরা। জবাবে ১৯৬ রান তুলতেই সব উইকেট হারায় সফরকারীরা।
বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২৪৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার জেসন রয় ও ফিল সল্টের ব্যাটে ভালো শুরু পায় সফরকারীরা। দুই ওপেনার মিলে তুলে ফেলেন ৫৪ রান। ফিল সল্টকে (৩৫) বিদায় করে জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান।
পরের ওভারেই আঘাত হানেন এবাদত। এবার তিনে নামা দাভিদ মালানকে (০) রানের খাতা খুলতে দেননি ডানহাতি পেসার। মিডঅনে সহজ ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পরের ওভারের প্রথম বলেই আরেক ওপেনার রয়কে (১৯) বোল্ড করে দেন সাকিব। এই সময়ে মাত্র ১ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
চাপের মুখে ইংল্যান্ডের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন স্যাম কারান ও জেমস ভিন্স। দুজনের ৪৯ রান। ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে উঠে আসা কারান ২৩ রান করে বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ভিন্সও। ব্যক্তিগত ২৬ রানে তিনি বিদায় নেন সাকিবের তৃতীয় শিকার হয়ে। এর কিছুক্ষণ পর ফের এবাদতের আঘাত। এবার ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলীকে (২) টিকতে দেননি এবাদত। সরাসরি বোল্ড করেন এই ডানহাতি পেসার।
ইংল্যান্ডের দলীয় দেড়শ পার হওয়ার পর আঘাত হানেন তাইজুল। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকা ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারকে (২৬) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার। ১৫৮ রানে ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। সেই ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি তারা। পরের ৩৮ রান তুলতেই বাকি ৩ উইকেট হারায় বাটলার-বাহিনী। শেষদিকে ক্রিস ওকসের ৩৪ রানের ইনিংস শুধু হারের ব্যবধানটাই কমিয়েছে।
বল হাতে ৪ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। ২ উইকেট করে ঝুলিতে পুরেছেন তাইজুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন। আর ১টি করে উইকেট গেছে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজের দখলে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে কাঙ্ক্ষিত শুরু পায়নি বাংলাদেশ। দলীয় ১৭ রানের ভেতর সাজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। এরপর দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। তাদের ৯৮ রানের জুটিতে অনেকটা স্বস্তি ফিরে টাইগার শিবিরে। দলীয় ১১৫ রানে শান্ত ৫৩ করে রান আউট হলে বেশি দূর যেতে পারেননি সঙ্গী মুশফিকও। আদিল রশিদের গুগলিতে বোল্ড হন তিনি। তাকে থামতে হয় ৯৩ বলে ৬ চারে ৭০ রান করে।
এদিন আগের দুই ম্যাচে রান করা ইনফর্ম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও সাজঘরে ফেরেন মাত্র ৮ রানে। রশিদের ৩৫ তম ওভারের তৃতীয় বলে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ। এর পরের বলেই আউট হলেন তিনি। মুশফিকের পর মাহমুদউল্লাহকেও বোল্ড করলেন রশিদ। অল্প সময়ে দলের দুই অভিজ্ঞের বিদায়ে কিছুটা চাপে পড়েন বাংলাদেশ।
পরে অফিফ হোসেনকে সঙ্গে দিয়ে এগোতে থাকেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ৩৪ বলে ২৫ রান করা সাকিব ফিফটি পূর্ণ করলেন ৫৫ বলেই। মার্ক উডের বলে লেগ সাইডে এক রান দিয়ে অর্ধশতক পূরণ করেন তিনি। আগের ম্যাচেও অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন সাকিব।
একপ্রান্ত সাকিব আগলে থাকলেও অন্য প্রান্তে চলে আসা-যাওয়ার মিছিল। ক্রিস ওকসের বলে কাভারে মঈন আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন আফিফ। সাকিবের সঙ্গে তার জুটি থামলো ৪৯ রানেই। দলীয় ৪৯ তম ওভাবে জফরা আর্চারের পঞ্চম বলে জেসন রয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিবও। তিনি করেন ৭৫ রান। ৭১ বলের ইনিংসে সাকিব চার মেরেছেন ৭টি।
এর আগে রেহান আহমেদের করা দশম ওভারের শেষ বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৫ রান করে ফিরেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৬ তম ওভাবে আর্চারের ধীরগতির বাউন্সারে আর্চারের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তাইজুল।
ইংল্যান্ডের জফরা আর্চার ৮ ওভার ৫ বলে করে ৩৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া আদিল রশিদ ও স্যাম কারান প্রত্যেকে নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। ক্রিস ওকস, রেহান আহমেদের ঝুলিতে এসেছে আরও ১ করে ইউকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২৪৬/১০ (সাকিব ৭৫, মুশফিক ৭০, শান্ত ৫৩; আর্চার ৩৫/৩, কারান ৫১/২, আদিল ২১/২)
ইংল্যান্ড: ৪৩.১ ওভারে ১৯৬/১০ (ভিন্স ৩৮, সল্ট ৩৫, ওকস ৩৪; সাকিব ৩৫/৪, এবাদত ৩৮/২, তাইজুল ৫২/২)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৫০ রানে জয়ী
সিরিজ: ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
সিরিজ সেরা: আদিল রশিদ (ইংল্যান্ড)