বাঁশখালীতে পুলিশ ও বিএনপি’র সংঘর্ষে এএসপি (সার্কেল), ওসিসহ ৩০ জন আহত হয়েছে। আজ শুক্রবার(২৬ আগস্ট) বিকালে এ ঘটনা ঘটে।
বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে সমাবেশ প্রথমে পুকুরিয়া ও পরে কালীপুরের গুনাগুরীতে করার জন্য চেষ্টা করা হলেও আওয়ামী লীগের বাধার মুখে করতে না পেরে বাধ্য হয়ে জাফরুল ইসলামের বাড়ির উঠানে সমাবেশ করা হয় বিকালে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল জাফরুল ইসলামের বাড়িতে এসে জমায়েত হয়ে দক্ষিণ জেলার বিএনপি নেতাসহ বিভিন্ন উপজেলার নেতাদের সমন্বয়ে মিটিং শেষ করে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মিছিল সহকারে জাফরুল ইসলামের বাড়ি থেকে প্রধান সড়কের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ তাদের প্রধান সড়কে না ওঠার জন্য বলে। তখন বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে দুই পাশের ধানী জমিতে ছড়িয়ে পড়ে।
উত্তেজিত কর্মীদের জাফরুল ইসলামের ছোট ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, বিএনপি নেতা আশেক এলাহী সোহেল ও শওকত ওসমান চেষ্টা করে পিছনে সরিয়ে নিতে চাইলে কর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
তখন বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ বড় একটা ইট এসে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. কামাল উদ্দিনের মাথায় ও মুখে পড়ে তিনি গুরুতর আহত হলে পুলিশ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
এসময় একদিকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ অপরদিকে পুলিশের রবার বুলেট নিক্ষেপে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা পিছলে হটলেও কিছুক্ষণ পর পর ইট নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলির আওয়াজে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বাঁশখালী থানার ওসি’র আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে টহলে থাকা সব পুলিশ সদস্য এবং আনোয়ারা সাতকানিয়া সহ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। ঘটনার সময় পুলিশ প্রায় ২০/২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
ঘটনার সময় বাঁশখালী থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন (৪০), সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) মো. হুমায়ুন কবির (৫০), সহ পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত এসএম আরিফুর রহমান (৪৩), এসআই নজরুল ইসলাম (৩০), এএসআই নজরুল ইসলাম (৩৫), পুলিশ সদস্য মিনহাজ উদ্দিন (২৫), মাইন উদ্দিন (২৩), বিপ্লব দে (২৩), আব্দুল কাদের (২৬), মফিজ আলম (২৫) আহত হয়ে বাঁশখালী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক অমিত দাশ।
অপরদিকে, ঘটনার সময় দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল নেতা শহীদুল আলম (৪০), মো. ইব্রাহিম (১৮), ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন (৪৫) সহ আর ও কয়েকজন ইটের আঘাতে আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তারা বাঁশখালী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেনি।
তারা চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা যায়।
রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনায় কোনো মামলা কিংবা কেউ আটক হয়নি বলে থানা সূত্রে জানা যায়।
ঘটনার ব্যাপারে জাফরুল ইসলামের ছোট ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা বলেন, “কর্মীদের মাঝে ভুল বুঝাবুছির কারণে ইট-পাটকেল ছোড়ার ফলে এ ঘটনা হয়েছে যা দুঃখ জনক।”
এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “তাদের সমাবেশে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিলে তারা আমাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ঘটনার সূত্রপাত করে। তখন আমি সহ আমাদের ১০/১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
এদিকে, সারাদেশের বিএনপি’র কর্মসূচির অংশ হিসাবে ছাত্রনেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম হত্যা এবং জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাবেশ জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর কালীপুরস্থ বাড়ির উঠানে উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মাস্টার লোকমানের সভাপতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আবু সুফিয়ান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান, জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শহিদুল আলম বুলবুল, বাঁশখালী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সবুর, জেলা বিএনপি’র সাবেক প্রচার সম্পাদক শাখাওয়াত জামাল দুলাল, জেলা বিএনপি’র সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী, এড. কাশেম চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন, চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, বিএনপি নেতা মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, বাঁশখালী পৌরসভা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এড. লায়ন নাছির উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসল পলাশ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহিদুল আলম শহিদ।
উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী ও জেলা যুবদল নেতা এড. শওকত ওসমানের যৌথ সঞ্চালনায় এসময় স্থানীয় নেতারা আলোচনায় অংশ নেন।
এদিকে, বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ যাতে প্রধান সড়ক কিংবা অন্য কোনো স্থানে করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথকভাবে বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় এবং তারা মিছিল সমাবেশ করে তাদের নৈরাজ্যের জবাব দেবে বলে ঘোষণা দিয়ে মাঠে অবস্থান নেয়।
বাঁশখালী থানার ওসি সহ প্রায় ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।