মিতু হত্যার কয়েক দিন পর সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নির্দেশে তার ছাত্রজীবনের বন্ধু সাইফুল হক তার কর্মচারী মোখলেসুর রহমান ইরাদকে দিয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ওয়াসিম ও আনোয়ারের বিকাশ নম্বরে তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন।
আজ মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে সাইফুল হক সাক্ষ্য দেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিভাগে পড়ার সময় বাবুল আক্তারের সঙ্গে সাইফুল হকের বন্ধুত্ব হয়।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সাইফুল হক বলেন, “আমি আগে প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা করতাম। প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল মাল্টিব্যাক প্রিন্ট অ্যান্ড হক লিমিটেড। ওই ব্যবসায়ের অবস্থান ছিল মোহাম্মদপুরের বছিলায়। লেখাপড়া শেষে ঢাকায় চাকরি করার সময়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। পরবর্তীতে আমি চাকরি ছেড়ে প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসার এক পর্যায়ে আমার আর্থিক সংকট দেখা দিলে আমি বাবুল আক্তারকে আমার ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রস্তাব দিই। উনি আমার ব্যবসায়ে ২০০৯ সালে মাহমুদা আক্তার ভাবির নামে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০১৬ সালের ৬ জুন, মিতু ভাবি খুনের পরদিন আমার মোবাইলে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল আসে। ফোন থেকে আমাকে বলা হয় আপনি কি টাকা পাঠিয়েছেন? কীসের টাকা জিজ্ঞেস করলে বলে এসপি বাবুল আক্তার টাকার কথা বলেনি? তখন কলের লাইন কেটে যায়।”
২০২১ সালের ৯ মে পিবিআই মিতু হত্যার তদন্তের জন্য ডেকেছে জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, “২০২১ সালের ৯ মে পিবিআই থেকে আমাকে ওই ঘটনা তদন্তের জন্য ডাকা হয়। তৎকালীন ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমারের জিজ্ঞাসাবাদে চট্টগ্রাম এসে আমি সবকিছু খুলে বলি। ওই সময় আমার ব্যবহার করা একটি মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়। পরের দিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমি সাক্ষীর জবানবন্দি দিই।”
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুর রশিদ বলেন, “মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারের বন্ধু সাইফুল হকের স্বাক্ষ্য ও আসামীপক্ষের জেরা হয়েছে। আগামীকাল বুধবারেও সাইফুল হককে আসামীপক্ষ জেরা করবেন।”
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
মামলার বাকি আসামীরা হলেন মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খায়রুল ইসলাম। ২০১৬ সালে মিতু খুন হওয়ার পর তার স্বামী সেই সময়ের পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন।
নানা নাটকীয়তা শেষে পিবিআই-এর তদন্তে এখন তিনিই এ মামলার আসামী। এসপি বাবুল তার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে ছিলেন। বদলি হওয়ার পর তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।