আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে ৩৬ বছর পর বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছিল। স্বপ্ন দেখছিলেন লিওনেল মেসিও কিন্তু কিলিয়ান এমবাপে যেন গ্রিক রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠলেন।
খেলার ৭৯ মিনিট পর্যন্ত যাকে অসহায় মনে হচ্ছিল সেই তিনিই দুই মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে বদলে দিলেন ফাইনালের চিত্রনাট্য। ম্যাচে ফিরে আসে ফ্রান্স।
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর ২-২ গোলের সমতা থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে ১০৮তম মিনিটে লিওনেল মেসি গোল করে দলকে ৩-২ গোলে এগিয়ে নিয়ে গেলেও ১১৮তম মিনিটে সেটি শোধ করে খেলায় ৩-৩ গোলে সমতা ফেরায় ফ্রান্সের এমবাপে।
তারপর পেনাল্টিতে ফ্রান্স দুই গোল মিস করলে ৪-২ গোলে জিতে কাপ উঠে আর্জেন্টিনার হাতে।
আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি আগেই বলেছিলেন, ফ্রান্সকে আটকানোর পরিষ্কার পরিকল্পনা আছে তাঁর। কথার সঙ্গে কাজের একদম হুবহু মিল দেখিয়েছেন তিনি শুরুর দিকে। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের রেফারির বাঁশির পর থেকেই চেপে ধরে আলবিসেলেস্তেরা।
২১তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে হুলিয়ান আলভারেজের পাওয়া বল বক্স থেকে শট নিতে যাচ্ছিলেন আনহেল দি মারিয়া কিন্তু সেই মুহূর্তে তাকে ধাক্কা দিয়ে বসেন উসমান দেম্বেলে। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক থেকে সহজেই আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। শুধু তা-ই নয়, একমাত্র ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল করার কীর্তি গড়লেন তিনি। তাছাড়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ২৬ ম্যাচ খেলার রেকর্ডও তাঁর।
৩৬তম মিনিটে উপমেকানোর ভুলে নিজেদের অর্ধে বল পায় মেসি। দারুণ দক্ষতায় মাক আলিস্তারকে বল বাড়ান তিনি। টেনে নিয়ে বক্সে আলিস্তার খুঁজে নেন দি মারিয়াকে। দারুণ এক শটে লরিসকে পরাস্ত করে বল জালে পাঠান জুভেন্টাসের এই ফরোয়ার্ড। ব্যবধান দ্বিগুণ করে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতির আগেই আক্রমণভাগে দুই পরিবর্তন আনেন ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। এমবাপেও সেভাবে বিপদ সৃষ্টি করতে পারেননি।
কিন্তু ২৩ বছর বয়সি এই ফরোয়ার্ড মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যেকোনো সময়ে, যেকোনো মুহূর্তে। এমনি এমনি তো আর তাকে সময়ের সেরা বলা হয় না। ৭৯ মিনিটে কোলো মুয়ানিকে বক্সের ভেতর ফাউল করে বসেন ওতামেন্দি। পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। স্পট কিক থেকে গোল করেন এমবাপে। এর ঠিক পরের মিনিটেই সমতা ফিরিয়ে চমকে দেন তিনি। থুরামের সঙ্গে দেওয়া-নেওয়ার পর দারুণ ভলিতে এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে পরাস্ত করেন এই ফরোয়ার্ড।
খেলার যোগ করা সময়ে জালকে লক্ষ্য করে বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ এক শট নেন মেসি কিন্তু দুর্দান্ত দক্ষতায় ফ্রান্সকে ফাইনালে টিকিয়ে রাখেন ফরাসি অধিনায়ক হুগো লরিস।