টেকনাফে শিশু আলো হত্যা মামলায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

টেকনাফ প্রতিনিধি | বুধবার , ১১ মে, ২০২২ at ৬:৪৪ অপরাহ্ণ

কক্সবাজার টেকনাফের শিশু আলী উল্লাহ আলো(৭) চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

তিনি আজ বুধবার(১১ মে) বিকালে আদালতে এ রায় প্রদান করেন। দীর্ঘ প্রায় ১ ঘণ্টা রায় পড়ে শোনানোর পর ৬ আসামির বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো মো. সুমন মিয়া, নজরুল ইসলাম, সৈয়দুল আমিন প্রকাশ লম্বাইয়া, হাজতি আসামি ইয়াছিন প্রকাশ রায়হান, মো. ইয়াকুব, মো. ইছহাক প্রকাশ কালু।

অপর ২ আসামি পলাতক মহিব উল্লাহ ও হাজতি আসামি মো. দিদার মিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস প্রদান করেছে আদালত। এ সময় হাজতে থাকা ৪ আসামি ডকে হাজির ছিল এবং মামলার বাদী মো. আবদুল্লাহও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদার বিল এলাকার রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মো. আবদুল্লাহ ও ফারজানা পারভীন সুইটি’র ৭ বছরের শিশু পুত্র মো. আলী উল্লাহ আলোকে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র কর্মচারী মো. সুমন আলী বাড়ির সামনের কাচারি ঘরে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যায়।

পরে পাখির বাসা দেখানোর কথা বলে মো. আলী উল্লাহ আলোকে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র কাচারি ঘরের সিলিংয়ে তুলে তার হাত-পা বেঁধে মুখে জোর করে স্কচটেপ লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় মো. আলী উল্লাহ আলো শোর চিৎকার করলে আসামি মো. সুমন আলী ও অন্যান্য আসামিরা মো. আলী উল্লাহ আলোকে অপহরণ করার বিষয়টি বাড়ির লোকজন হয়ত জানতে পেরেছে মনে করে মো. আলী উল্লাহ আলোকে আসামিরা চালের সিলিংয়ের উপর জবাই করে হত্যা করে।

এ ঘটনায় খুন হওয়া মো. আলী উল্লাহ আলো’র পিতা মো. আবদুল্লাহ বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় আসামি মো. ইয়াকুব, ইয়াছিন প্রকাশ রায়হান, মো. সুমন মিয়া ঘটনা স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

মামলাটি পর্যায়ক্রমে টেকনাফ থানার এসআই মাহবুবুর রহমান, এসআই হারুনর রশীদ এবং টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার তদন্ত করে আদালতে গত ২০১২ সালের ৩০ জুন চার্জশিট দাখিল করেন।

এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদী মো. আবদুল্লাহ ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে নারাজি আবেদন করলে আদালত বাদীর নারাজির আবেদন গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সালের ৪ মার্চ মামলাটি সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশে পর্যায়ক্রমে সিআইডি’র চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু, সহকারী পুলিশ সুপার এস.এম সাহাব উদ্দিন আহমদ এবং সর্বশেষ সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রো জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির সরকার তদন্ত করে এজাহারভুক্ত ৫ জনসহ মোট ৮ জন আাসামির নাম উল্লেখ করে গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪/১০৯/১১৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলাটি টেকনাফের আমলী আদালত থেকে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০২০ সালের ২৪ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারকার্য শুরু করেন।

বিচারিক আদালত মামলায় ২৯ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও তাদেরকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। এরপর আলামত প্রদর্শন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন যাচাই, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি আজ বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য্য করা হয়।

রায় ঘোষণা করার পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুলী পিপি এড. ফরিদুল আলম বলেন, “এ রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অপরাধ যেই করুক শাস্তি তাকে পেতেই হবে। টেকনাফের বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ’র শিশুপুত্র চাঞ্চল্যকর আলো হত্যা মামলার রায়ে আমি সন্তুষ্ট।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী সেলিম উদ্দীন রাজু বলেন, “আমি ও আমার মক্কেল এ রায়ে অসন্তুষ্ট। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করব।”

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, বাদী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট আমির হোসেন, এডভোকেট দীলিপ দাশ ও এডভোকেট আমিন উদ্দিন প্রমুখ।

আসামিদের পক্ষে এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, এডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম-৪ (স্টেট ডিফেন্স), এডভোকেট সেলিম উদ্দিন রাজু প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিআইইউর ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে মাইক্রোস্ট্রাকচারড ফাইবার বিষয়ক সেমিনার
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাইয়ে নদীতে ডুবে এক ছাত্রের মৃত্যু