আফগানিস্তানে ৬ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও দেড় হাজার মানুষ।
প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার প্রকৃত চিত্র এখনও পাওয়া যায়নি। তাই আজ বুধবারের(২২ জুন) এ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুর্গতদের উদ্ধারে এবং সেখানে ওষুধ ও খাবার পৌঁছে দিতে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আয়ুবি।
তিনি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। সেখান থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগবে।”
২০০২ সালের পর আফগানিস্তানে এর আগে কোনো ভূমিকম্পে এত প্রাণহানি হয়নি। আফগান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভূমিকম্পের ছবিতে অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে দেখা গেছে।
ভূমিকম্পের পরপর তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা জানিয়েছিলেন, ভূমিকম্পে শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ভূমিকম্পে ছয় শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার কথা প্রাথমিকভাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন আখুন্দজাদার উপ-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী শরাফুদ্দিন মুসলিম।
পরে পাকতিকা প্রদেশের তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মদ আমিন হোজাইফা রয়টার্সকে বলেন, “ভূমিকম্পে ১ হাজার মানুষ মারা গেছে এবং দেড় হাজার মানুষ আহত হয়েছে। সম্ভবত উভয় সংখ্যাই আরও বাড়বে। অনেক পরিবার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আহতদের অনেককে রাজধানী কাবুল এবং গারদেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের (পিএমডি) ভাষ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১টা ৫৪ মিনিটের দিকে আফগানিস্তানের খোস্ত শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে ভূপৃষ্ঠের ৫০ দশমিক ৮ কিলোমিটার গভীর ভূমিকম্পটির উৎপত্তি।
ইউরোপীয় মেডিটেরিনিয়ান সিসমোলোজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) ভূমিকম্পটির মাত্রা ৬ দশমিক ১ বলে জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) ভূমিকম্পটির মাত্রা ৫ দশমিক ৯ ছিল বলে জানিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আইয়ুবির বরাতে আরো বলা হয়, নিশ্চিত মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনাই পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশে ঘটেছে। গভীর রাতে অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকায় হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।
পাকতিকা প্রদেশে ২৫৫ জন নিহত এবং দুইশ’র বেশি মানুষ আহত হছেন। খোস্ত প্রদেশে ২৫ জন মারা গেছেন, হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯০ জন। গায়ানে একটি পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সাইট ইতিল্লাত-ই রোজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ভূমিকম্পটি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী পাকিস্তান ও ভারতেও অনুভূত হয়েছে। তবে এসব দেশ থেকে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ইএমএসসি-এর ওয়েবসাইটে করা এক পোস্টে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের এক বাসিন্দা লিখেছেন, “শক্তিশালী ও দীর্ঘ ঝাঁকুনি ছিল।”
পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের এক বাসিন্দা বলেছেন, “(ভূমিকম্পটি) শক্তিশালী ছিল।”
টুইটারে ইএমএসসি বলেছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ভূমিকম্পটির ঝাঁকুনি অনুভব করেছে।
আফগানিস্তানের গণমাধ্যমে আসা ছবিগুলোতে ভূমিধস, ধ্বংস হয়ে যাওয়া মাটির তৈরি বাড়িঘরের ছবি ও মাটিতে কম্বলে ঢাকা বেশ কয়েকটি মরদেহ দেখা গেছে।