জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২২টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কর্ণফুলী এবং সংযুক্ত নদীসমূহের (কাচালং, রাইক্ষ্যিং ও শলক নদ) টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। এতে করে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে রাঙামাটির তিনটি নদী খনন হতে যাচ্ছে। ষাটের দশকে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির ছয় দশক পর হ্রদকেন্দ্রিক তিনটি নদীর নৌপথ খনন হতে যাচ্ছে। নদী শাসনের এই প্রকল্প গ্রহণের ফলে দুর্ভোগ কমবে নদীকেন্দ্রিক এলাকার বাসিন্দাদের; এমনটাই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার একনেক সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক সভার চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কর্ণফুলী এবং সংযুক্ত নদীসমূহের টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে করবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রকল্পটির অধীন কাপ্তাই হ্রদের অভ্যন্তরীণ তিন নদী কাচালং, রাইক্ষ্যিং ও শলক নদ খনন করা হবে। একই সঙ্গে নদীপাড়ের ভাঙনরোধ ও নদীর পাড় রক্ষায় রক্ষাপ্রদ কাজ, খাল খননসহ উন্নয়নমূলক কাজ হবে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হতে যাওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত। এছাড়া ষাটের দশকে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর থেকে বিগত ছয় দশক পর বর্তমান এসে কাপ্তাই হ্রদের ইকোলজিক্যাল অবস্থা জানতে একটি জরিপ করা হবে প্রকল্পটির অধীনে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কাচালং নদীর ৪৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার, রাইক্ষ্যিং নদীর ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও শলক নদীর ৮ দশমিক ৫ কিলোমিটারসহ মোট ৬৫ কিলোমিটার নৌ–পথ খনন করা হবে। এছাড়া জেলার দশটি উপজেলার ১০টি খালের ২৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার নৌ–পথ এবং ৪০টি স্থানে ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার রক্ষাপ্রদ কাজ হিসেবে রক্ষা বাঁধ দেয়া হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাঙামাটি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা আজাদীকে বলেন, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কর্ণফুলী এবং সংযুক্ত নদীসমূহের (কাচালং, রাইক্ষ্যিং ও শলক নদ) টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রকল্পটি পাস হয়েছে। আগামী বছরের (২০২৬) জানুয়ারিতে শুরু হতে যাওয়া প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নদীপথ, খাল খনন, রক্ষা বাঁধ তৈরিসহ কাপ্তাই হ্রদের জন্য একটি ইকোলজিকাল সার্ভে হবে প্রকল্পের অধীনে। তিনি আরও বলেন, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর থেকে এ নদীপথগুলোর কোনো খনন হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কাচালং, রাইক্ষ্যিং ও শলক নদীনির্ভর নৌপথে যাতায়াতে দুর্ভোগ কাটবে। কৃষিপণ্য পরিবহন, বাজারজাতকরণসহ স্থানীয় আর্থ–সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা রাঙামাটি জোনের চেয়ারম্যান ও রাঙামাটি জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দিন সেলিম আজাদীকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদের নৌ–পথে খনন এটা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বাঘাইছড়ি উপজেলায় যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। কাচালং নদীসহ জেলার তিনটি নদীপথ খননের প্রকল্প পাসের খবর আমাদের আনন্দ ও স্বস্তিদায়ক। আমরা প্রত্যাশা করব শীঘ্রই যেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং জেলাবাসীর দুর্ভোগ যেন কাটে।












