ফয়সাল দেশে না বিদেশে, নিশ্চিত নয় পুলিশ

ওসমান হাদি হত্যা । নম্বরের ভুলে গ্রেপ্তার মোটরসাইকেল মালিকের জামিন

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদি হত্যার মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিমের অবস্থান ৯ দিনেও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর সচিবালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসে পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির তরফে বলা হয়, ফয়সালকে ধরার ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ডেভিল হান্ট অভিযানের ‘ফেইস২’ এর সর্বশেষ তথ্য দিতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও মূল বিষয় হয়ে উঠে হাদির হত্যাকাণ্ড। এ বিষয়ে অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক খন্দকার রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান শফিকুল ইসলাম, বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান, এআইজি (মিডিয়া) শাহাদাত হোসেন, র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী হাদি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

এদিকে হাদি হত্যায় ব্যবহৃত বলে যে মোটরসাইকেলের তথ্য দিয়েছিল র‌্যাব, সেই বাইকটির একসময়ের মালিক আব্দুল হান্নানকে জামিন দিয়েছে আদালত। খবর বিডিনিউজের।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জানতে চান, মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল দেশে আছেন, নাকি বিদেশে? জবাবে অতিরিক্ত আইজি রফিকুল ইসলাম বলেন, ফয়সাল দেশে নাকি দেশের বাইরে, এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ফয়সালের বাবামা, স্ত্রীসহ এ পর্যন্ত মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে ডিএমপির ডিবি প্রধান শফিকুল বলেন, র‌্যাব, ডিবি, বিজিবি মিলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছে অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানান তিনি। যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এই হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক না ব্যক্তিগত, গত কদিনের তদন্তে কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কিনা, সেই প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে শফিকুল বলেন, রাজনৈতিক কারণে এই হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত চলছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা ইন্তেখাব বলেন, আটক ব্যক্তিদের কাছ যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা হচ্ছে, ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার পর ফয়সাল ও আলমগীর (মোটরসাইকেল চালক) আগারগাঁও যান এবং হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত পিস্তল ও গোলাবারুদ লুকানোর পরিকল্পনা করেন। অস্ত্রের ব্যাগটি তার বাবাকে দিয়ে শ্যালক শিপুর কাছে হস্তান্তর করতে বলেন এবং সে সিএনজিযোগে সাভারের উদ্দেশে রওনা দেন। পরে ফয়সালের বাবা ব্যাগটি শিপুর কাছে দেয়। পরে শিপু নরসিংদীতে গিয়ে তার বোন, অর্থাৎ ফয়সালের স্ত্রী সামিয়ার কাছে অস্ত্রের ব্যাগটি দেয়। পরে সামিয়া ব্যাগটি শিপুকে লুকানোর জন্য বললে শিপু তার বন্ধু ফয়সালের বাসায় সেটি রাখার জন্য দেয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, পরে বিভিন্নভাবে হাদিকে গুলি করার বিষয়টি প্রচারিত হলে ভয় পেয়ে পার্শ্ববর্তী তরুয়ার বিলে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ব্যাগটি ফেলে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই পরে র‌্যাব সেগুলো উদ্ধার করে।

সেক্টর কমান্ডার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনার পর তারা সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেন। মানব পাচারে সহায়তার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সীমান্ত এলাকায় অন্যতম মানব পাচারকারী ফিলিপকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নম্বরের ভুলে গ্রেপ্তার মোটরসাইকেল মালিকের জামিন : হাদি হত্যায় ব্যবহৃত বলে যে মোটরসাইকেলের তথ্য দিয়েছিল র‌্যাব, সেই বাইকটির একসময়ের মালিক আব্দুল হান্নানকে জামিন দিয়েছে আদালত। গতকাল শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম হাসান শাহাদাত। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই মাসুম মিয়া জানান, হান্নানের পক্ষে তার আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছে।

১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির ওপর আক্রমণ হয়। মোটরসাইকলে এসে খুব কাছ থেকে গুলি চালানো হয় হাদিকে। হাদিকে প্রথমে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে একদফা অস্ত্রোপচারের পর নেওয়া হয় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে। সবশেষ সোমবার হাদিকে নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুর খবর আসে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদলীয় প্রার্থীর বাইরে মনোনয়ন ফরম নিলেন বিএনপির ৭ নেতা
পরবর্তী নিবন্ধভারতের প্রেস নোট প্রত্যাখ্যান ঢাকার