খুনিদের গ্রেপ্তারে ইনকিলাব মঞ্চের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

শাহবাগ ছাড়লেন বিক্ষোভকারীরা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার আল্টিমেটাম দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। একই সঙ্গে শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জনগণের সামনে জবাবদিহি করার দাবি জানিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি।

গতকাল ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির দাফন শেষে সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জনগণের সামনে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের এই আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন। এরপর আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় পুনরায় শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়েন ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা।

জাবের বলেন, আমাদের দাবি দুটি। এক. ওসমান হাদির হত্যাকারী, হত্যার পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারীসহ সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুই. সিভিলমিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের আওয়ামী দোসরদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। একই সঙ্গে রোববার বিকালের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সহকারী উপদেষ্টাকে জনগণের সামনে এসে জবাবদিহি করতে বলেন তিনি। তা না হলে তাদের অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে বলে দাবি জানান। খবর বাংলানিউজের।

জাবের বলেন, ওসমান হাদিকে একজন খুন করেনি। এর পেছনে একটি পুরো চক্র রয়েছে। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে আমরা শুধু সন্দেহের চোখে দেখি না, আবার সন্দেহের বাইরে রেখেও দেখি না। ওসমান হাদির যে লড়াই, তাতে আওয়ামী লীগের সমস্যা তো আছেই, বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দলেরও সমস্যা আছে। ওসমান হাদির সংগ্রাম আমাদের সুশৃঙ্খলভাবে জারি রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ওসমান হাদিকে যারা খুন করেছে, পরিকল্পনা করেছে, সহায়তা করেছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাদের প্রত্যেককে যেন অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হয়, সেজন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করি। ওসমান হাদিকে খুন করার ১৭২ ঘণ্টা হয়ে গেছে, রাষ্ট্র এখনো বলতে পারেনি তার খুনিরা কোথায়?

তিনি বলেন, ওসমান হাদির রক্তের মধ্য দিয়ে ঘোষণা দিচ্ছি, খুনিদের সঙ্গে কোনো সুশীলতা নেই। টকশোতে যারা খুনিদের পক্ষে কথা বলবে, তাদের সঙ্গে আমরা নেই। বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রতিহত করবে। যারা এই খুনের পক্ষে বয়ান উৎপাদন করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনকে যাতে বাধাগ্রস্ত করা যায় সেজন্য নানা ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন যেন না হয়, নির্বাচনে যেন আওয়ামী লীগ প্রত্যাবর্তন করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এই প্লট সাজানো হয়েছে। তিনি বলেন, তারা মনে করছে, এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকে হত্যা করলে তেমন কোনো ইমপ্যাক্ট তৈরি হবে না। কারণ জনগণের বিশ্বাস তাদের ওপর থেকে সরে গেছে। শুধুমাত্র ওসমান হাদিই ছিল জনতার কণ্ঠস্বর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক, জুলাই জাগরণের প্রাণ। সুতরাং তাকে হত্যা করা হলে আওয়ামী লীগকে ব্যাক করা যাবে, তারা এমনটাই মনে করছে।

জাবের বলেন, বাংলাদেশে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত ১৭ বছরে কেউ যদি মাটির ৪০ ফুট নিচে লুকিয়েও থাকে, তাকে বের করেছে। তাহলে এখন তারা পারছে না কেন? এসব বুঝিয়ে লাভ নেই। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে গুম কমিশনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হবে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলেছিল, যাদের গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে, সীমান্তে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেসবের প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে। তাই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের শান্ত থাকতে হবে। এ সময় তিনি ভাঙচুরে না জড়ানোর জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

শাহবাগ ছাড়লেন বিক্ষোভকারীরা : বিডিনিউজ জানায়, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে শাহবাগ ছেড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাদিকে দাফনের পর সেখানে জড়ো হয়ে থাকেন ইনকিলাব মঞ্চসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে হাদি হত্যার বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের স্লোগানে পুরো শাহবাগ এলাকা প্রকম্পিত হয়ে পড়ে।

গতকাল বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দল বেঁধে তারা সেখানে অবস্থান করেন। এরপর ছোট ছোট দলে তাদের সেখান থেকে চলে যেতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের ভিড় কমে এলে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল করতে শুরু করে। চারদিকের সড়কেই গাড়ি চলতে শুরু করে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রিয় হাদি, তুমি থাকবে প্রতিটি বাংলাদেশির বুকের মধ্যে : প্রধান উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধওসমান হাদিকে শেষ বিদায়