সৃষ্টি যেভাবেই সৃষ্ট হোক না কেন স্রষ্টার নিকট তার কৃতজ্ঞতার দায়বদ্ধতা অলিখিত। উদাহরণস্বরূপ সন্তানের কাছে তার মা–বাবা। তাই স্রষ্টার প্রতি নিবেদন/সমর্পণ মানুষকে বিমোহিত করে। নিজের চেতনাকে আত্মতৃপ্তিতে ডুবিয়ে দেয়। পার্থিব জগতে এই অপার্থিব উপলদ্ধি নিজের মনন ও জগতের দৃষ্টিভঙ্গির উদারতম দিকের উন্মেষ ঘটায়। মানুষের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করে তুলে। এই নিবেদন মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই অর্থাৎ সৃষ্টিলগ্ন থেকেই নানা রূপে বা নানা আয়োজনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অর্পণ করে আসছে। কেউ একাগ্রচিত্তে স্রষ্টার আরাধনা করে, কেউ বিধিবদ্ধ পূজা অর্চনার মাধ্যমে, কেউবা বিমূর্ত হয়ে স্রষ্টার দর্শনের উদ্দেশ্যে বসুন্ধরায় ঘুরে বেড়ান। স্রষ্টার প্রতি এই নিবেদন থেকেই খুবই অল্পসংখ্যক মানুষ নিজের চেতনার বা মননের খোঁজ পান। যা সবসময়ই স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার, মানব কল্যাণ ও মানব সেবার কথা ব্যক্ত করেন। তাঁরা নিজের চিত্তের কথা চিন্তা না করে পরহিতকর কাজে বা মানব সেবা বা মানব মুত্তির উপায় নিয়েই সর্বদাই ব্যস্ত থাকেন এবং তা সমাজে ও দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে দিতে থাকেন। যাতে জগত সংসারে মানুষ তার দর্শনের বিস্তার ঘটাতে পারে।
এই সাধন পথের এক অনন্য দর্শন হল আকাশবৃত্তি। যা আমাদের মানবীয় প্রবৃত্তির সুন্দর, স্নিগ্ধতার দিকে অনুপ্রাণিত করে। যা আমাদের অল্পতে সন্তুষ্ট হতে শিক্ষা দেয়। যা আমাদের সমবেতভাবে বসবাসের শিক্ষা দেয়। ‘যা কিছু তুমি পাবে, যা কিছু তোমার আছে, যা কিছু তুমি পেয়েছ তা দিয়েই তোমার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও তাতেই তুমি সমৃদ্ধ হবে।’ এই আকাশবৃত্তির আদর্শ নিয়ে দীর্ঘ ৪৯ বছর ধরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার দক্ষিণ রামপুর গ্রামে ৩২ প্রহর ব্যাপী ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে’ নামজপ কীর্তন পরিচালিত হয়ে আসছে। ২১ ডিসেম্বর প্রত্যুষে আহুতি এবং শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্রদানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হবে। সাথে সাতদিন ব্যাপী দুপুর ও রাতে অন্নপ্রসাদ বিতরণ। শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতনন্দ পুরী মহারাজের ছোট ভাই শ্রীমৎ স্বামী অচ্যুতনন্দ পুরী মহারাজের প্রতিষ্ঠিত এই আকাশবৃত্তি মহানামযজ্ঞের সুর্বণজয়ন্তী এই বছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে। ভক্তরা এই মহোৎসবে এসে নামকীর্তন শুনে যা দান করেন; তা দিয়েই এই ৫০ বছরের পরমপরা চলে আসছে। শ্রীমৎ স্বামী অচ্যুতনন্দ পুরী মহারাজের বাণী: ‘যাহাদের আকাশবৃত্তি তাহাদের কোন প্রয়োজনবোধ নেই। কিন্তু আমাদের প্রয়োজনবোধ আছে এই বরই অদ্ভূত।’ ‘আকাশবৃত্তির যাত্রা চিরন্তন।’ লেখক: ব্যবস্থাপক, বান্দরবান, এন সি সি ব্যাংক পিএলসি।












