শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য শামীম উদ্দিন খানের একটি মন্তব্যের প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবন আট ঘণ্টা তালাবন্ধ রাখার পর বিজয় দিবসের কারণে অবস্থান কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের নেতারা।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ায় উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান, উপ–উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ আটকে পড়েন।
তালা দেওয়ার পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপস্থিত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) প্রতিনিধিরা। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাকবিতণ্ডা হয়।
চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম রনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্যের একটি বক্তব্যকে ঘিরে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয়েছে বলে আমাদের চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকে জানিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি সৃষ্টি করা কোনো ছাত্র সংগঠনের কাজ হতে পারে না। তাদের কোনো দাবি দাওয়া থাকলে সেটা প্রশাসনের সাথে বসে সুরাহা করতে পারে। এভাবে তো প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত করা কোনোভাবে কাম্য না।
পরে বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের পাশে এসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের মাঝে পাল্টাপাল্টি বাক্য বিনিময় হলে উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উভয় পাশে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি করেন।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে চবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় সাধারণ জনগণের করের টাকায়, কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অর্থে নয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় সহ–উপাচার্য পাকিস্তানি বাহিনীকে ‘যোদ্ধা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা জাতির জন্য চরম অপমানজনক। তার মতে, পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে এবং মা–বোনদের সম্ভ্রমহানি করেছে। এ ধরনের বক্তব্যের জন্য সহ–উপাচার্যকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তালা খোলা হবে না বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
এ সময় শাখা ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ছাত্রদল পুরনো সংস্কৃতিতে ফিরছে। তারা চবি প্রশাসনকে জিম্মি করে চাঁদা দাবি করছে। ছাত্রদলের এরূপ ঘৃণ্য কাজকে আমরা মন থেকে ঘৃণা করি। তারা যদি এই সংস্কৃতি থেকে ফিরে না আসে তাহলে ছাত্র শিবির তাদেরকে কঠোরভাবে প্রতিহত করবে।
পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবারের জন্য তাদের অবস্থান কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেন। পরবর্তীতে আবার তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
এ বিষয়ে জানতে চবি উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে আছি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিডিনিউজ জানায়, গতকাল রাতে প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, অবস্থান কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলেও তাদের আন্দোলন চলবে।
প্রসঙ্গত, রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয় প্রশাসন আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধ্যাপক শামীমের বক্তব্য ঘিরে এই আন্দোলনের সূত্রপাত। আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক শামীম বলেন, ‘যে সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে, সে সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে; আমি মনে করি এটি রীতিমত অবান্তর। কারণ ওই সময় তারা তাদের জীবন শঙ্কায় ছিলেন।’
তার ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে রাতেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। পরে সোমবার সকালে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে শামীম উদ্দিন খানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে বলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, নারী অঙ্গনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ প্রতিবাদে অংশ নিতে দেখা যায়।











