উপ-উপাচার্যের বক্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা দিল চবি প্রশাসন

চবি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপউপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত বক্তব্যকে ঘিরে গণমাধ্যমে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপউপাচার্যের বক্তব্যের কিছু অংশ খণ্ডিতভাবে প্রচার হওয়ায় জনমনে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপউপাচার্য (প্রশাসন) ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি জাদুঘরের পরিচালক ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপউপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সামপ্রতিক জুলাই আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ইতিহাসের প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য সঠিক গবেষণাপদ্ধতি অনুসরণ করা অপরিহার্য। গবেষণাভিত্তিক বিশ্লেষণ ছাড়া কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। একাডেমিক আলোচনার অংশ হিসেবে তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারেএমন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বক্তব্য প্রদানকালে উপউপাচার্য অনিচ্ছাকৃতভাবে ‘পাকিস্তানি বাহিনী’র পরিবর্তে ‘পাকিস্তানি যোদ্ধা’ এবং ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ অর্থে ‘অবান্তর’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এসব শব্দচয়ন ভুলভাবে উপস্থাপিত হওয়ায় বক্তব্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

উপউপাচার্য তার বক্তব্যে মুজিবনগর সরকারের ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কাদিরের লেখা ‘দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীন’ গ্রন্থের উল্লেখ করেন। পাশাপাশি শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীরের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি।

এ ছাড়া ১৯৭২ সালে নিখোঁজ হওয়া প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জহির রায়হান শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাকে খুঁজে পাওয়া গেলে এ সংক্রান্ত বহু অজানা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনের সুযোগ তৈরি হতে পারত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তির শেষাংশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করে। একই সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে বক্তব্যের পূর্ণ প্রেক্ষাপট ও সঠিক অর্থ উপস্থাপনের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৮ ঘণ্টা তালাবদ্ধ ছিল চবির প্রশাসনিক ভবন
পরবর্তী নিবন্ধহাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেয়া হলো সিঙ্গাপুরে