দেশে উৎপাদিত আলুর ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি, রপ্তানি বৃদ্ধি, আলুর ভ্যালুচেইন এডসহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক আলু উৎসব শেষ হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, কৃষক সর্বশক্তি দিয়ে ফসল ফলায় কিন্তু তারা ন্যায্যমূল্য পায় না। কৃষকদের প্রতিবাদ করার জায়গাও নেই, এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা সেই স্থানটি নিতে পারে। তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে আলুর উৎপাদন কম বেশি হচ্ছে। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এতে অনেক সময় দাম পড়ে যায়। আবার কখনো দাম অত্যধিক হয়। গত ২০২৩ সালে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল ৬০ ও ২৪ সালে ৮০ টাকা কেজিতে। চলতি ২০২৫ সালে ১ কোটি ১২ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন ব্যয় ২০–২৫ টাকা। অথচ কৃষককে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৬–২০ টাকায়। এ সময় তিনি ডিসেম্বর মাসে কোল্ডস্টোরে আলু রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, হেক্টরপ্রতি আলুর উৎপাদন তিন গুণ বেশি। আলুর অমৃত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে। কম খরচে বেশি আলু উৎপাদনের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তা ছাড়া চিপসের আলু উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ভিয়েতনাম আমাদের কাছে সার বিক্রি করতে চায় বিনিময়ে তারা আলু আমদানি করবে। ভিয়েতনামে আগামী বছর ২ লাখ টন আলু রপ্তানি করা হবে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে আলু উৎপাদনের কারণে বাজার স্থির থাকে না। কৃষক দাম পায় না। এজন্য আলুর নিট ডিমান্ড ঠিক করা হচ্ছে, এবার মাঠ পর্যায়ে কী পরিমাণ আলু উৎপাদন হয় তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভাতের পরেই আলুর গুরুত্ব ও প্রাপ্যতা রয়েছে। দেশের কোন এলাকায় কী ধরনের ফসল চাষ করা হবে তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আলুকে অর্থকড়ি ফসল হিসেবে মাল্টি ডায়নামিক অবস্থায় নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এজন্য আলু চাষ, বিক্রি, কোল্ডস্টোরেজসহ সম্পৃক্তদের নিয়ে অচিরেই বৈঠক করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সারাবিশ্বে সবজি হিসেবে আলু এতই জনপ্রিয় যে, সাধারণ মানুষ এর ভালো–মন্দ গুণাগুণ বিচারের ধার ধারেন না। তবে পুষ্টিবিদরা এর সঠিক গুণাগুণ অনেক আগেই নিশ্চিত করেছেন। আলু শুধু সবজিই নয়, এর তৈরি শুকনা খাবারও বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়। আবার বাঙালির রসনায়ও আলু অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত শস্যের তালিকায় আলুর স্থান চতুর্থ। আলুতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আছে ক্যারোটিনয়েড ও পলিফেনলের মতো প্রয়োজনীয় ফাইটোকেমিক্যাল। পুষ্টিমান বিবেচনায় আলুর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কার্বোহাইড্রেট উপাদান। একটি মাঝারি আকারের আলুতে রয়েছে প্রায় ২৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। আলুর কার্বোহাইড্রেট অংশের উল্লেখযোগ্য অবস্থা হচ্ছে স্টার্চ। আর খুব সামান্য হলেও স্টার্চের একটি বিশেষ অংশ আমাদের শরীরে বিভিন্ন কাজে লাগে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চালের পর আলু অর্থকড়ি ফসল। ২০২৫ সালে ২২ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। সাধারণত নভেম্বরে সব কোল্ডস্টোরে আলু শেষ হয়ে গেলেও এবার ৭ লাখ টন রয়ে গেছে। ৬–৮ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হচ্ছে অথচ উৎপাদন ব্যয় ২৫ টাকা। ভারত–পাকিস্তানে উৎপাদন ব্যয় ১০ টাকা কেজি হলেও আমাদের দেশে ২০–২৫ টাকা। উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে। কীভাবে আলুর ভ্যালুচেইন করা যায় তা নির্ধারণ করতে হবে। তা ছাড়া আলু উৎপাদনকারীরা যাতে ন্যায্য মূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা গবেষণার উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, নেদারল্যান্ড থেকে বীজ আনতে পারেন কিন্তু সেটি দেশের কোন অঞ্চলে কতটা ফলন হয় তা দেখতে হবে। এজন্য গবেষণার বিকল্প নেই। আলু উৎপাদনকারীদের জন্য দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে স্কুল করা যায়।






