বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন ডিজিটালাইজ করার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট। এ সংক্রান্ত একটি রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আসিফ হাসানের বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করে। রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান; সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। খবর বিডিনিউজের।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, বর্তমান ব্যবস্থায় বিয়ে ও তালাকের তথ্য কার্যকরভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় না, যা পারিবারিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করে এবং অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের বৈধতা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। এ ছাড়া কোনো অপারেশনাল ও কার্যকর ডিজিটাল ডেটাবেস না থাকায় প্রতারণার সুযোগ তৈরি হয়, যা নাগরিকের সম্মান ও মৌলিক অধিকার–সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত মানবিক মর্যাদাুলঙ্ঘন করে। রায়ে বলা হয়, রাইট টু লাইফ শুধু বেঁচে থাকার অধিকার নয়, এটি মানবিক মর্যাদা রক্ষার অধিকারকেও অন্তর্ভুক্ত করে। নিবন্ধন সংক্রান্ত আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো পূর্ণাঙ্গ, অপারেশনাল ও কার্যকর ডিজিটাল ব্যবস্থা তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাই কোর্ট।
রায়ের পর অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, আদালত নির্দেশনা দেন, বিয়ে ও তালাকের সকল তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে প্রতিটি তথ্য সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত থাকে, ডেটাবেস সম্পূর্ণ কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয় এবং নাগরিকরা, বিশেষ করে নারীরা, সহজেই তথ্য যাচাই করতে ও ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারেন।
আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে দ্রুততম সময়ে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইশরাত। তিনি বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশের পরিবারের নিরাপত্তা, নারীর সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আইনগত স্বচ্ছতা এবং সবচেয়ে বড় বিষয় বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত প্রতারণা বন্ধে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।
তিনি মনে করেন, ডিজিটাল নিবন্ধন চালু হলে গোপন বিয়ে, একাধিক বিয়ে লুকানো, পূর্ববর্তী তথ্য গোপন, তালাক প্রমাণের জটিলতা– এসব সমস্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে এবং নাগরিকদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা, সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও সমাজে পারস্পরিক বিশ্বাস পুনর্গঠনের পথ আরও সুদৃঢ় হবে।
২০২১ সালের ৪ মার্চ চারজন ভুক্তভোগীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান এই রিট মামলা করেন। তার আবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় কোনো ডিজিটাল ডেটাবেস না থাকায় আগের বিয়ে বা তালাকের সঠিক তথ্য যাচাই করা প্রায় অসম্ভব, এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বিয়ে–তালাক সংক্রান্ত প্রতারণা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে।












