যুক্তরাষ্ট্র এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৮৫ হাজার ভিসা বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি জানান, আমেরিকান কমিউনিটিগুলোকে সুরক্ষিত রাখা এবং জননিরাপত্তা মান বজায় রাখার জোর প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে এ পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে ৮৫,০০০ ভিসা বাতিল করেছি, এর মধ্যে ৮,০০০ এর বেশি শিক্ষার্থী ভিসাও রয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। খবর বিডিনিউজের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভিসা বাতিল হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে–নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং হামলা ও চুরির মতো অপরাধ। এই অপরাধগুলোর কারণে গত বছর প্রায় অর্ধেক ভিসা বাতিল হয়েছে। এসব মানুষ সরাসরি আমাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আমরা তাদেরকে দেশে রাখতে চাই না। তিনি জানান, ভিসা যাচাইয়ের পদ্ধতি কঠোর রাখা হচ্ছে, বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের আবেদনকারীদের জন্য।
আফগানিস্তান প্রসঙ্গে কর্মকর্তা বলেন, আমি মনে করি (মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর) এই প্রশাসন সব সময়ই আফগানিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। ভিসা আবেদনকারীরা যাতে হুমকি না হয়, তা আমরা যথাযথভাবে যাচাই করার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাই। তিনি জানান, নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়া শেষ করার ক্ষেত্রে কোনও তাড়া নেই। যত সময় লাগুক, আমরা নেব। আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিমুক্ত, এটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনও ভিসা মঞ্জুর করা হবে না।
এই কর্মকর্তাকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন সমপ্রতি যেসব নীতি নিয়েছে, সেগুলোর আওতায় ফ্যাক্ট–চেকিং বা কনটেন্ট মডারেশন–সম্পর্কিত কাজে যুক্ত থাকা (যেমন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বা সিভিল সোসাইটি সংগঠনে কাজ করা) কি ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে কিনা। উত্তরে তিনি বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক মূল্যবোধ। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও মে মাসে এমন বিদেশিদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন, যারা আমেরিকানদের নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করে।
তবে তিনি বলেন, ভিসা অনুমোদন কোনও একক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয় না, বরং আবেদনকারীর সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়। প্রতিটি আবেদনকারীর ক্ষেত্রে কনস্যুলার কর্মকর্তা সব দিক দেখে সিদ্ধান্ত নেন।
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিবাসন ও নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করেছে। বহু আফগান এখনও বিশেষ মার্কিন কর্মসূচির আওতায় পুনর্বাসন বা ভিসার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বহুস্তরীয় নিরাপত্তা যাচাই বাধ্যতামূলক, যদিও এতে দীর্ঘ সময় লাগছে। বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিবর্তন ও প্রশাসন বদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিও বদলায়। অপরাধমূলক ঘটনার কারণে ভিসা বাতিল নতুন নয়, তবে এ বছর যে ৮৫ হাজার ভিসা বাতিল হয়েছে, তা ওয়াশিংটনের জননিরাপত্তা মান বজায় রাখা এবং হোমল্যান্ড–সিকিউরিটির ঝুঁকি মূল্যায়নে কঠোর অবস্থানকেই স্পষ্ট করে।











