এনইআইআর বাস্তবায়নের দাবি ফোন নির্মাতাদের

| মঙ্গলবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার’ (এনইআইআর) ব্যবস্থা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে ‘মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (এমআইওবি)। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তারা।

এমআইওবি নেতারা এমন সময় এ দাবি তুললেন, যখন এনইআইআরের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারীরা। সংবাদ সম্মেলনে এমআইওবি নেতারা বলেন, এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে মোবাইল ফোনে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বাড়বে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা। দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও আমদানিকারকদের সংগঠনটি বলেছে, এনইআইআর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বহু দেশে এটি কার্যকর রয়েছে। বাংলাদেশে এ সিস্টেম চালু হলে অবৈধ, চোরাই, কপি বা রিফারবিশড ফোনের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে। একই আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করে ডজনখানেক ফোন চালানোর মতো ঝুঁকিও বন্ধ হবে। খবর বিডিনিউজের।

সংগঠনের সভাপতি জাকারিয়া শহিদ বলেন, বাংলাদেশের বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশই অবৈধভাবে আমদানি হওয়া মোবাইল ফোন। ফলে সরকার বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর কার্যকর হবে। এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। তখন সরকার অনুমোদিত বৈধ হ্যান্ডসেটই কেবল নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকতে পারবে। কিন্তু দেশের বর্তমান মোবাইল বাজারের বেশির ভাগই ‘আনঅফিসিয়াল’ ফোনের দখলে। সরকারের ভাষ্য, ব্যবসায়ীরা চোরাপথে ট্যাঙভ্যাট ফাঁকি দিয়ে এসব ফোন নিয়ে আসছে, অনেক ক্ষেত্রে এভাবে অন্যদেশ থেকে নিম্নমানের, ব্যবহৃত বা ‘রিফারবিশড’ হ্যান্ডসেট এনে দেশে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলোকে অবৈধ বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।

এনইআইআর বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ীরা। গত রোববার সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক যুগের বেশি সময় ধরেই তারা এসব ফোনে ব্যবসা করেছেন প্রকাশ্যে। কখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসেনি।

এ আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে সংবাদ সম্মেলনে এমআইওবির সভাপতি জাকারিয়া শহিদ বলেন, এখানে এনইআইআরকে কেন্দ্র করে একটি মহল নানা ধরনের ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে; সাধারণ গ্রাহকের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছে। দেশে অবৈধ মোবাইল ফোন বেশি থাকার কারণে গ্রাহকরা নানা সমস্যায় পড়ছেন। এছাড়া দেশীয় শিল্প বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। উৎপাদন সরঞ্জামের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়লেও স্থানীয় কারখানাগুলো এখনো ফোনের দাম বাড়ায়নি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, দেশের মোবাইল শিল্প বর্তমানে ১৮টি উৎপাদনকারী কারখানার সমন্বয়ে শক্তিশালী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি দেশিবিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, দেশের মাসিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৫ লাখ স্মার্টফোন ও ২৫ লাখ ফিচার ফোন। যদিও গ্রে মার্কেটের চাপের কারণে এখনও ৩০৪০ শতাংশ সক্ষমতা অব্যবহৃত রয়েছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন বাজারের আকার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এই শিল্প দেশের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, নারী কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সিন্ডিকেট নয়, এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কথা উল্লেখ করে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, মোবাইল উৎপাদন শিল্পে সিন্ডিকেট থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বর্তমানে ১৮টি কোম্পানি উৎপাদন লাইসেন্সধারী। যারা মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজারে কাজ করছে। তাই একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বা সিন্ডিকেশন এর অভিযোগ বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনন্দলোকে মঙ্গলালোকে
পরবর্তী নিবন্ধইসলামিক ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীদের মাঝে ফরম বিতরণ শুরু