মীরসরাইয়ে ঘরে ঘরে এখন চলছে নবান্ন উৎসব। অগ্রহায়ণের শেষে এখন মাঠের ধান কেটে প্রায় বাড়ির আঙিনার আশেপাশে সর্বত্র কাটা ধান। কৃষাণীরা ব্যস্ত তাদের ধান সংগ্রহ সেরে কী করে সারা বছরের ধান ও চাল মজুত করবেন। কেউ ব্যস্ত কীভাবে বাড়তি ধান বাজারে বিক্রি করবেন। কেউ ধার–দেনা সেরে একটু ফুরসত পাবেন। আবার একই সাথে চলছে শীতের পিঠাপুলির প্রস্তুতি। মীরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় এবার আমন চাষ বেড়েছে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর। গত বছর বন্যার কারণে অনেক কৃষক আমন আবাদ করতে পারেননি। চলতি বছর সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আবারও আমন চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ১৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিল। ২০২৪ সালে চাষ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৩০ হেক্টরে। ওই বছর আমন চাষ কম হয় ১৭ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে।
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে মীরসরাইয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। তাতে ১২ হাজার ৮০০ কৃষকের আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হযেছিল। রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ হাজার ১০০ জন কৃষকের। তাই আমন চাষ কমে যায়। চলতি বছর কৃষি অফিসের বিভিন্ন প্রণোদনা ও সহযোগিতায় বন্যার ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম জানান, চলতি বছর উপজেলায় ১৯ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ইউনিয়নে ফসল কাটা প্রায় শেষ। চলতি বছর ১ হাজার ৬৫০ জন কৃষককে আমন চাষে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আমন চাষিদের দেওয়া হয় ৫ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার। বন্যার পর প্রণোদনা পেয়ে কৃষকেরাও খুশি। তারা কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করছেন।
উপজেলার করেরহাট হিঙ্গুলী, করেরহাট, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, ওয়াহেদপুর, সাহেরখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সোনালি রঙের আমন ধান তুলতে মাঠে ব্যস্ত কৃষকরা। বাড়িতে উঠোনে ধান নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষাণীরা।
উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের কৃষক মো. শাহজাহান বলেন, গত বছর বন্যার কারণে আমন আবাদ করতে পারিনি। আমার ৬ শতক জমির রোপা আমন নষ্ট হয়েছিল। চলতি বছর কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার পেয়ে আমন চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। এবার আশা করছি ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে। ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের আবদুল হান্নান বলেন, ধান কেটে শুকানোর পর বাড়ি নিয়ে আসছি। এখন মাড়াই সেরে ঘরে তুলবো।
এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, বন্যায় গত বছর আমন আবাদ কমেছিল। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে চাষ বেড়েছে। আমরা প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে ফসল উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এখন আমন ধান কাটা চলছে। শেষ হতে কিছুদিন সময় লাগবে।












