বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ‘ভারতের জলসীমা অতিক্রম করায়’ মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর ৫টি ফিশিং ট্রলার ধরে নিয়ে যায় ভারতের কোস্ট গার্ড। ওই পাঁচ ট্রলারের ১৪৯ জন জেলেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। আটককৃত জেলেদের বরাতে তাদের স্বজনরা জানিয়েছে ঘন কুয়াশায় দিকভ্রষ্ট হয়ে এবং ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভারতীয় জলসীমায় ভেসে যায় তারা। গত ১৫ নভেম্বরের পর থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এসব জেলেকে ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করে ফ্রেজারগঞ্জ কারাগারে আটক রেখেছে।
ইতোমধ্যে ভারতের কারাগার থেকে কেউ কেউ পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। এছাড়া জেলেদের আটকের বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তারা বেঁচে থাকার খবর পেয়ে পরিবারে স্বস্তি ফিরেছে। আটক জেলেদের পরিবারের দাবি–দুদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আটক জেলেদের ফিরিয়ে আনা হোক।
জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ভারতীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে কুতুবদিয়া উপজেলার ১৫ জেলেকে আটক করে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাদের ফ্রেজারগঞ্জ উপকূলীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক জেলেরা সকলেই কুতুবদিয়ার বাসিন্দা। তাদের একজন শিপংকর দাশ। তার মা নয়ন রানী দাশ জানান, বড় ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকেই তার মেঝ ছেলে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। ছেলেকে আটকের খবর শুনে তিনি পাগলপ্রায়। জেলেদের স্বজনরা আটককৃতদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের দ্রুত উদ্যোগ কামনা করেছেন। ট্রলার মালিকের ভাতিজা জিয়া উদ্দিন জানান, আটক ১৫ জেলে ও ট্রলার উদ্ধারের জন্য জেলেদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সহায়তার আবেদন জানানো হবে।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যথোয়াইপ্রু মারমা জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত হয়েছেন। আটক জেলেদের পরিচয় নিশ্চিত করতে নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া পৃথক ঘটনায় কুতুবদিয়ার অপর ২টি ট্রলারসহ মোট ৫৬ জন জেলে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। ১৯ নভেম্বর কুতুবদিয়ার ২৮ জেলে এবং একই দিন বাঁশখালীর একটি ফিশিং ট্রলারসহ ২৬ জেলেকেও ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন বলেন, যথাযথ কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপে আমাদের মৎস্যজীবীদের মুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে তাদের নিরাপদে দেশে ফেরত আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে গত ১৮ নভেম্বর মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা এলাকার নুরুল হাশেম বহদ্দার এর মালিকানাধীন এফ.বি নুরে মদিনা নামক ফিসিং বোট ২৪ জন মাঝি–মাল্লাহসহ সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে নিখোঁজ ছিল। পরে একটি সূত্র জানায় ট্রলারটি ভারতের জলসিমা অতিক্রম করার অভিযোগে ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করে ২৪ পরগনা জেলার একটি থানায় সোপর্দ করে। এ ব্যাপারে ফিশিং বোটের মালিক নুরুল হাশেম গত ১৮ নভেম্বর মহেশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। তিনি জানান, নিখোঁজ মাঝিমাল্লাদের ফিরে পেতে কঙবাজার জেলা প্রশাসক এবং মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে সহায়তা কামনা করেছেন।












