দৈনিক আজাদীতে গত ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে ‘দেড় যুগের ব্যবধানে নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দ্বিগুণ’ একটি সংবাদ। এতে বলা হয়েছে, নগরে ৫৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে তা ভেঙে ফেলার জন্য ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) অনুরোধ করে সিডিএ। এর ৮ বছর পর ২০১৩ সালে রাজধানীর রানা প্লাজা ট্রাজিডির পর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে অভিযান শুরু করে চসিক। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সিডিএ নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা হালনাগাদ করেনি। আবার চসিকের কার্যক্রমও স্থির ছিল। তবে সমপ্রতি দেশে বার বার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় নড়চড়ে বসে চসিক–সিডিএ দুই সংস্থায়। নগরে ১০২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে তা চসিককে হস্তান্তর করে সিডিএ। এরপ্রেক্ষিতে চসিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে গত সোমবার ৫ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করে।
তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পূর্বের তালিকা থেকে ইতোমধ্যে অপসারণ করা হয় ৬টি ভবন। ওই হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকার কথা ৫১টি। কিন্তু সামপ্রতিক তালিকায় তা বেড়ে ১০২–এ উন্নীত হয়। অর্থাৎ দেড় যুগের ব্যবধানে নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
চসিককে দেয়া সিডিএর সামপ্রতিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকাভুক্ত ভবনগুলোর মধ্যে ৬৮টি আবাসিক ও ১২টি বণিজ্যিক ভবন রয়েছে। ১৩টি ভবন আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুইভাবেই ব্যবহার হয়। এছাড়া ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১টি মার্কেট ও ১টি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। তালিকায় বাকলিয়ার একটি, শুলকবহর এলাকার ২টি এবং মোমিন রোডের একটি ভবনের নাম থাকলেও ভবনগুলো বাণিজ্যিক নাকি আবাসিক তা উল্লেখ করা হয়নি।
তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ঝূঁকিপূর্ণ ভবনের অনেকগুলো ৫০ থেকে ১০৫ বছরের পুরনো। কিছু ভবনের মেয়াদ চলে গেছে। ভূমিকম্প ও অন্যান্য কারণেও একপাশে কাত বা হেলে পড়েছে কয়েকটি ভবন। হেলে পড়া ভবনের মধ্যে কিছু রয়েছে কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত। এছাড়া কিছু পুরাতন ভবনের কাঠামো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। দেয়ালের বীম ও দেয়ালে রয়েছে ফাটল। ফলে যে কোনো সময় ভবনগুলো বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।
কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশের পরও এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন না ভাঙার ফলে ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোন বড় দুর্যোগে প্রাণঘাতীসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় বাদ পড়েনি বহু গুরুত্বপূর্ণ ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর অবস্থার বিবরণে জানা যায়, অনেক আগে নির্মিত, ঢালাই ভেঙে যাওয়া, কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ছোট ও বড় বড় ফাটল, ব্যবহার অনুপযোগী পরিত্যক্ত ভবনের কথা উল্লেখ রয়েছে। ভবনগুলো খুব কম সময়ের মধ্যেই নির্মাণ ত্রুটি ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের ফলে নগরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ প্রত্যাশিত নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে শহরাঞ্চলে বেকারত্ব, পরিবেশের অবনতি, নগরে দরিদ্র জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ আরও বহুমাত্রিক সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নাগরিক এসব সমস্যা সমাধানে সঠিক পরিকল্পনার পাশাপাশি বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের ফলে নগরে সংকট বাড়ছে। যে ভবনগুলো প্ল্যান ছাড়া নির্মিত হয়েছে, সেগুলো এই সংকটের বহিঃপ্রকাশ। এজন্য সচেতন মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী নগরজুড়ে জরিপ চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার। এ কাজে সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে সমন্বিতভাবে। কেননা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত এবং অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কাজটি যত দ্রুত করা যাবে ততই নগরবাসী নিরাপদ হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ভবন একেবারে ভেঙে ফেলতে হবে। কিছু ভবনে বড় ধরনের সংস্কার করে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যাবে। আর কিছু ভবন সাধারণ সংস্কারের মাধ্যমেই ভূমিকম্প ঝুঁকিমুক্ত রাখা সম্ভব। একইভাবে ভিজুয়াল রেটিং ম্যানুয়ালের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক দেখে একটি ভবন কী অবস্থায় রয়েছে, তা নির্ধারণ করা যাবে। সিসমিক ইভ্যালুয়েশন ম্যানুয়ালে বিস্তারিত মূল্যায়ন করে ভবনের মান নির্ধারণ করা যাবে। সিসমিক রেট্রোফিটিং ম্যানুয়ালে তুলনা কম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।








