চট্টগ্রাম ওদের মূল টার্গেট; তাদের কারো বাড়ি নোয়াখালী আর কারো বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট। তাদের মূল পেশা চুরি। তারা চট্টগ্রাম আসে চুরি করতে। চুরির আগে তারা লোকেশন টার্গেট করে ওই এলাকার আশেপাশে ব্যাচেলর বাসা ভাড়া নেয়। নগরীতে ঘুরে বেড়ায়। ঘুরে ঘুরে ঠিক করে কোন বাড়িতে চুরি করা যায়। সুযোগ বুঝে চুরি করে আবার–যে যার বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু এবার তাদের শেষ রক্ষা হলো না। নগরীর হালিশহর গোল্ডেন আবাসিক এলাকার কে–ব্লকের একটি বাসায় গত ৫ নভেম্বর চুরি হয়। এই চুরির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই চোর চক্রের মূল হোতা আব্দুল আলিম শাকিলকে (২৯) এবং ইয়াসিন আরাফাত শাকিলকে (২৫) দু’জন গ্রেপ্তার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হালিশহর থানার এসআই মোশারফ হোসেন। গত ১৬ নভেম্বর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চুরি করে যেই রিকশাযোগে আসামিরা পালিয়েছে সেই রিকশা চালক আবু বক্করকে (৪৫) আগে হালিশহর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৪ নভেম্বর ডবলমুরিং এলাকা থেকে মো. মিয়াকে (৫৩) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আবদুল আলিম শাকিল তার কাছে জুয়া খেলার জন্য স্বর্ণ বন্ধক রাখে। দুদিন পর ২৬ নভেম্বর আসামি ইয়াছিন আরাফাত শাকিলের চাচী ববি আক্তারকেও স্বর্ণ বন্ধক রাখার দায়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
হালিশহর থানা পুলিশ জানায়, গত ৫ নভেম্বর নগরীর হালিশহরের গোল্ডেন আবাসিকের কে–ব্লকের শেষ মাথার একটি ভবনের চতুর্থ তলার একটি বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। সেলাই রেঞ্জ দিয়ে জানালার গ্রিল কেটে বাসাটিতে প্রবেশ করেছিল চোরের দল।
এ ঘটনায় বাসার কর্তা ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১১ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ দুই লাখ ১১ হাজার টাকা ও একটি রিয়েলমি সি–১১ মোবাইল ফোন চুরি হয়।
হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ নুরুল আবছার দৈনিক আজাদীকে বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে চোরের দলের সন্ধানে কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নগরী এবং নোয়াখালী ও হবিগঞ্জ জেলায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে চোর চক্রের মূল হোতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া মালামালের বড় একটি অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হালিশহর থানার এসআই মোশারফ আজাদীকে বলেন, মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ গত সপ্তাহে হালিশহর এলাকা থেকে আব্দুল আলিম শাকিলকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যে নোয়াখালীতে তার নানা শ্বশুরের বাড়ি থেকে এবং স্থানীয় এক দোকানির কাছ থেকে কিছু স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।
আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে (আলিমকে) ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর চুরির সঙ্গে ইয়াসিন আরাফাত শাকিল জড়িত থাকার তথ্য পায় পুলিশ।
গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জ থেকে ইয়াসিন আরাফাত শাকিলকে গ্রেপ্তারের পর তাকেও ১ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকায় তার চাচীর বাসা থেকে আরও কিছু স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।
সব মিলিয়ে চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকারের মধ্য থেকে ৭ ভরি ৭ আনা ৪ পয়েন্ট স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান এসআই মোশারফ।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মূল পেশা চুরি। তারা নোয়াখালী, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চট্টগ্রামে আসে চুরির জন্য। নগরীর বিভিন্ন স্থানে তারা ব্যাচেলর বাসা ভাড়া নিয়ে নগরীতে ঘুরে ঘুরে চুরির টার্গেট করে। এরপর ঠিক করে কোন বাড়িতে চুরি করা যায়। সুযোগ বুঝে চুরি করে আবার যে যার বাড়িতে চলে যায়। আব্দুল আলিম শাকিলকে ৩ দিনের এবং ইয়াসিন আরাফাত শাকিলকে একদিনের রিমান্ড শেষে গত বুধবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।












