আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম দফায় ২৩৭টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর ফাঁকা থাকা আরও ৩৬টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। সব মিলিয়ে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৭৩টি আসনেই দলটির প্রার্থীদের নাম সামনে এলো। প্রথম দফায় ফাঁকা রাখা অনেক আসনে এবার বিএনপি প্রার্থী দেওয়ায় তাদের জোট বা আন্দোলনের শরিকদের ভাগ্যে কী জুটছে এই আলোচনা সামনে আসছে।
প্রশ্ন উঠেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভবিষ্যতে কোনো জোট বা সমঝোতা হলে যেসব আসনে বিএনপি নিজের কর্মীদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলো সেখান থেকে নাম বাদ পড়তে পারে কি না? অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, যে আসনগুলোতে প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে সেগুলোতে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিএনপি ২৭৩টি আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণার পর বাকি থাকা ২৭টি আসন জোট শরিকদের জন্য ফাঁকা রাখা হলো কি না এমন প্রশ্ন সামনে আসছে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনেও বিএনপির সঙ্গেই থাকবে বলে আলোচনা রয়েছে। এমনকি প্রথম তালিকা ঘোষণার পর অনেকগুলো আসনে জোট ও মিত্রদের মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের (বিএনপির) সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, যে সমস্ত আসনে তারা আগ্রহী, সে সমস্ত আসনগুলোতে আমরা কোনো প্রার্থী দিইনি। আমরা আশা করছি তারা তাদের নাম ঘোষণা করবেন, তখন আমরা চূড়ান্ত করব।’ যেমন ঢাকায় ছয়টি আসন ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি। এর মধ্যে নতুন তালিকায় চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও ফাঁকা রাখা হয়েছে ঢাকা–১৩ ও ঢাকা–১৭ সংসদীয় আসন। বিএনপির কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে ঢাকা–১৩ আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। আর ঢাকা–১৭ আসনে সক্রিয় আছেন বিএনপির শরীক দল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আন্দালিব রহমান পার্থ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৬ আসনেও প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এই আসনে জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আলোচনায় রয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। নতুন ঘোষিত তালিকায়ও ফাঁকা রাখা হয়েছে সংসদীয় আসন বগুড়া–২ এবং চট্টগ্রাম–১৪। এই দুই আসনে বিএনপির নির্বাচনী জোটের প্রার্থী হয়ে লড়তে পারেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এলডিপির সভাপতি অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বিএনপি এবারও প্রার্থী দেয়নি পটুয়াখালী–৩ এবং ঝিনাইদহ–২ সংসদীয় আসনে। এই দুটি আসনে জোটভুক্ত বা আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আলোচনায় রয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। এছাড়া জোট ও মিত্র দলগুলোর মধ্যে পিরোজপুর–১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, লক্ষ্মীপুর–১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র সাহাদাত হোসেন সেলিম প্রার্থী হতে পারেন। নতুন তালিকায়ও এই আসনগুলো ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। তবে ঢাকা–৭ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকের নাম আলোচনায় থাকলেও নতুন তালিকায় আসনটিতে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। অবশ্য জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ধর্মভিত্তিক আটটি দলের পাঁচ দফার আন্দোলনে যুক্ত আছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও।
এছাড়া কিশোরগঞ্জ–৫ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং ঝালকাঠি–১ আসনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলেও নতুন তালিকায় এই আসনগুলোতে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বিবিসি বাংলাকে জানান, এখনো ২৭টি আসন খালি রাখা হয়েছে। এরমধ্যে শরিকদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে যতটা দেওয়া সম্ভব দেওয়া হবে। বাকি আসনগুলোতে বিএনপি নিজস্ব প্রার্থী দেবে।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–১৮ আসন থেকে অংশ নেওয়ার আলোচনায় ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। ৩ নভেম্বর ঘোষিত প্রথম তালিকায় এই আসনটি ফাঁকাও রেখেছিল বিএনপি। কিন্তু নতুন তালিকায় এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রার্থী করেছে দলটি। এদিকে বিএনপিতে যোগ দিয়েই নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া। হবিগঞ্জ–১ আসনে থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন তিনি।
এছাড়া খুলনা–১ সংসদীয় আসনে সনাতন ধর্মাবলম্বী কৃষ্ণ নন্দীকে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে চমক দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর ফলে ওই আসনটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে দেশজুড়ে। প্রথম দফায় এই আসনে কোনো প্রার্থী না দিলেও এবার আমির এজাজ খানকে প্রার্থী করেছে বিএনপি।











