ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল প্রস্তুতির মধ্যে নির্বাচনি আইন ও বিধিতে আরেক দফা সংশোধনী আনা হচ্ছে। ‘পোস্টাল ভোটিং’ যুক্ত হওয়ার পর গণভোট অধ্যাদেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগের কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, গণভোটের কারণে আরপিওতে আবার সংশোধনী আনতে হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত সংশোধনী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উঠবে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। আচরণবিধিতেও ভাষাগত সংশোধন আসছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। খবর বিডিনিউজের।
আরপিও সংশোধনীতে পোস্টাল ব্যালটে ভোটগ্রহণ ও গণনা–সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করার কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশন–ইসি কর্মকর্তারা। সবকিছু চূড়ান্ত হলে ৭ ডিসেম্বরের কমিশন সভায় তফসিল নিয়ে আলোচনা করবে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে ভোট প্রস্তুতির শেষ ধাপে রয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নতুন আরপিও অনুযায়ী, আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি ভোট করতে পারবে না –এমন বিধান যোগ হয়েছে এবার। দেড় দশক পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যেমন সশস্ত্র বাহিনী ফিরেছে, তেমনই ‘না’ ভোট ব্যবস্থা এবার এসেছে একক প্রার্থীর আসনে। এর বাইরে সমভোট পেলে হবে পুনভোট, জোটে করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলের মার্কায় করার বিধানসহ বেশকিছু যুক্ত হয়েছে। সংশোধিত আরপিও এর ভিত্তিতে ইসি দল ও নির্বাচনি আচরণবিধি তৈরি করেছে।
এরইমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপে বেশকিছু সুপারিশ এসেছে। ভোটের প্রচারে পোস্টার নিষিদ্ধ হলেও আচরণবিধিতে ‘করণিক’ ত্রুটি থাকা, পোস্টার ব্যবহার বন্ধ করার পর বিলবোর্ড ব্যবহারও সীমিত করায় ইসির সমালোচনা করে বেশকিছু দল। ওয়ার্ড প্রতি বিলবোর্ড স্থাপন, মাইকের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন দলের প্রতিনিধিরা।
আরপিও সংশোধন ও আচরণবিধির অস্পষ্টতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব গেল সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আরপিও অধ্যাদেশ সংশোধনে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন লাগবে। তবে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর আচরণবিধি সংশোধন ইসি করতে পারবে। আরপিও’র অনুচ্ছেদ ২৭ সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে। এতে বলা হয়েছে -*পোস্টাল ব্যালটে কোনো প্রতীকের বিপরীতে ক্রস বা টিক চিহ্ন না দিলে তা গণনার বাইরে থাকবে। *কোনো আসনে আদালতের রায়ে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন এলে ওই আসনের জমা হওয়া পোস্টাল ব্যালটও গণনা করা হবে না। *পোস্টাল ব্যালটের সঙ্গে যে ঘোষণাপত্র যাবে, সেখানে ভোটার সই না করলে তা গণনায় নেবে না। আরপিও এর ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। প্রবাসী, নির্বাচনি এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী এবং কারাগারে বা হেফাজতে থাকা ব্যক্তি পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
অপরদিকে আচরণ বিধিমালার দফা ৪–এর উপ–বিধি (৩), বিধি ৬ এর উপ–বিধি (ক), (খ), (গ), (ঘ), বিধি ৯–এর উপ–বিধি (গ) এবং বিধি ২৬–এর উপ–বিধি (৩) এ করণিক ভুল রয়ে গেছে বলছেন ইসি কর্মকর্তারা। যেমন, ‘করিতে পারবেন না’ শব্দগুলোর স্থলে ‘করা যাইবে না’; ‘পারিবেন’–এর স্থলে ‘পারবেন’ শব্দ এবং ‘করিবে’ শব্দের স্থলে ‘করিতে পারে’ শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। এসব সংশোধন করা হচ্ছে।
এছাড়া বিধি ১৪(খ) সংশোধনীতে ইসির প্রস্তাব হচ্ছে– সংসদীয় আসনের প্রতি ইউনিয়ন বা পৌরসভা বা মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রতি একটি অথবা নির্বাচনি এলাকায় ২০টি (যা বেশি হয়) এর অধিক বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না। এ সংশোধনী অনুমোদন পেলে প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রতি একটি করে বিলবোর্ডে নির্বাচনি প্রচারের সুযোগ পাবেন। বিধি ১৭–এর উপবিধি (১) সংশোধন করে নির্বাচনি প্রচারে মাইক ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাবও রাখা হচ্ছে। তবে জোট করলেও ভোট করতে হবে স্ব স্ব দলের প্রতীকে–আরপিও’র এ বিধানটি নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপিসহ কয়েকটি দল ইসিতে দৌড়ঝাপ করেছে। এ সংক্রান্ত কোনো সংশোধনী প্রস্তাব ইসির তরফে করা হয়নি বলেছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।











