একাত্তরের এদিন থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। সে খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সেই বিজয়ের বার্তা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের করে তোলে আরও দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য। রণাঙ্গনে যখন যুদ্ধ চলছিল তখন আরেক যুদ্ধ চলছিল জাতিসংঘে। বাংলাদেশের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে তখন দারুণ উত্তেজনা। নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ বুশ (জর্জ ডব্লিউ বুশের বাবা) যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করে।
এদিন বাংলাদেশের সব রণক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকায় হানাদার বাহিনী পিছু হটছিল। সীমান্ত শহর দর্শনা সম্মিলিত বাহিনীর দখলে চলে আসে। ঢাকা চট্টগ্রাম করাচি–শত্রুর ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে চলে বোমাবর্ষণ। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আকাশে চলে জোর বিমান যুদ্ধ।
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র তখন বৈঠকের পর বৈঠক করছে। সবাই যখন চরম উদ্বেগ আর চিন্তার মধ্যে ছিলেন, তখন এলো খুশির সংবাদ। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে ভেস্তে যায়। পোল্যান্ডও এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। তবে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে। এদিন আখাউড়াতে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড গোলা বিনিময় হয়, যাকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘এঙেঞ্জ অব স্মল আর্মস ফায়ার’। সারারাত যুদ্ধের পর ৫ ডিসেম্বর ভোরে আত্মসমর্পণ করে হানাদার বাহিনী। কিছু সৈন্য গুলি খেয়ে মারা যায়, কিছু সৈন্য আখাউড়া রেললাইন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যায়। কিছু সৈন্য তিতাস নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায়।










