ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন। তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের সামনে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল আসছে বুধবার। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কাতার, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারত ইতোমধ্যে চিকিৎসা সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, খালেদার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার জন্য যে কথাটি আমি পূর্বেও বলেছি, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা উনাকে দেখেছেন। আজকেও ইউকে থেকে উনাকে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ আসবেন এবং উনারা দেখবেন। দেখার পরবর্তীতে উনাকে যদি ট্রান্সফারেবল হয়, আমাদের যদি ট্রান্সফার করার প্রয়োজন পড়ে, মেডিকেল বোর্ড মনে করে, তখনই সেই যথাযথ সময়ে উনাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে এ মুহূর্তে দেশের বাইরে নেওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান ডা. জাহিদ। তিনি বলেন, আমাদের সকল প্রস্তুতি আছে; কিন্তু সর্বোচ্চটা মনে রাখতে হবে যে, রোগীর বর্তমান অবস্থা এবং সর্বোপরি মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ এই মুহূর্তে আমাদের নেই। আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেই চিকিৎসা উনি সেটি উনি গ্রহণ করতে পারছেন অথবা আমরা যদি বলি উনি মেনটেইন করছেন। আমরা এই সংকটময় মুহূর্তে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে উনার সুস্থতার জন্য দোয়া চাই। এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাতে দেশবাসীর দোয়া, সারা পৃথিবীর অনেক মানুষের উনার প্রতি ভালোবাসা এবং দোয়ার কারণে হয়তোবা উনি এই যাত্রায় সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমরা আশা করি।
গুজবে কান দেবেন না : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং সেই সাথে কোনো ধরনের গুজব ছড়ানো এবং গুজবে কান না দেওয়ার জন্য বিনীতভাবে পরিবারের পক্ষ থেকে, দলের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে আমরা অনুরোধ করছি। আমাদের দল কীভাবে আপনাদেরকে ইনফরমেশন দেবে, সেটিও আমাদের দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করেছেন যে ধৈর্য ধারণ করার জন্য এবং উনি সার্বক্ষণিকভাবে বিরামহীনভাবে দেশি–বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল টিমের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া চিকিৎসাকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করছি এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য, সুস্থতার জন্য আপনাদের মাধ্যমে দেশ তথা সকল ধর্মের মানুষের প্রতি আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
ডা. জাহিদ বলেন, বিভিন্ন ধরনের গুজব, বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য বিভিন্ন জায়গায় দেখার পরিপ্রেক্ষিতে দলের পক্ষ থেকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিকভাবে উনার চিকিৎসার তদারকি করছেন। চিকিৎসার সমস্ত বিষয়ে উনি দেশি–বিদেশি চিকিৎসকদের সাথে আমাদের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ : জাহিদ বলেন, দলের মহাসচিব এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সারা দেশের মানুষের ন্যায় প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সার্বক্ষণিকভাবে উনার চিকিৎসার ব্যাপারে যথাযথ সহযোগিতা, এই হাসপাতাল, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং সকল কর্তৃপক্ষ দিয়ে যাচ্ছেন এবং আমরা সবার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ যারা অর্থাৎ আমেরিকা বলেন, ইউকে বলেন, পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না বলেন, কাতার বলেন, সৌদি আরাবিয়া বলেন, পাকিস্তান বলেন, ইন্ডিয়া বলেন, আমাদের অনেক সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান এই চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
অধ্যাপক জাহিদ জানান, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি–বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড বেগম জিয়ার চিকিৎসাসেবায় কাজ করছেন। এ মেডিকেল বোর্ড রয়েছেন অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক এ কিউ এম মহসিন, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক জিয়াউল হক, অধ্যাপক মাসুম কামাল, অধ্যাপক এ জেড এম সালেহ, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম ও ডাক্তার জাফর ইকবাল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক রফিকউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক জন হ্যামিল্টন, অধ্যাপক হামিদ রব, যুক্তরাজ্য থেকে অধ্যাপক জন প্যাট্রিক, অধ্যাপক জেনিফার ক্রস এবং পুত্রবধূ ডাক্তার জুবাইদা রহমান।
খালেদার নিরাপত্তায় এভারকেয়ারে এসএসএফ : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করার পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। গতকাল সকালে হাসপাতালের প্রধান ফটকে ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। দুপুরে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের গাড়ি ঢুকতে দেখা যায় হাসপাতালের ফটকে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, এসএসএফ সদস্যরা হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। উনারা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ম্যাডামকে দেখতে আসতে পারেন।
বিদেশ পাঠাতে চাইলে সরকার সহায়তা করবে : খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে চাইলে সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল বা পরিবার সিদ্ধান্ত নিলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত তার পরিবার বা দলের ওপর নির্ভর করছে।
খালেদাকে দেখে এলেন তিন বাহিনী প্রধান : বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিন বাহিনীর প্রধানরা। গতকাল রাতে তাদের দেখতে যাওয়ার বিষয়টি এক বার্তায় জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এতে বলা হয়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে গেছেন। তাদের বহনকারী গাড়ি রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের প্রধান গেট দিয়ে ঢুকতে দেখা যায়। তারা হাসপাতালে কিছু সময় থাকেন। এরপর রাত ৯টা ২০ মিনিটের পর বেরিয়ে আসেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, তিন বাহিনী প্রধান ম্যাডামের পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা ম্যাডামের আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া করেছেন।
২৩ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর তার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে নিবিড় চিকিৎসা দিচ্ছে মেডিকেল বোর্ড।












