‘আপনা-মাঝে শক্তি ধরো নিজেরে করো জয়’

গৌতম কানুনগো | সোমবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ তম প্রতিষ্ঠাদিবস ছিল ১৮ নভেম্বর। এ দিবস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের এক ধরনের স্মৃতিকাতর করে তোলে। গত ২১ ও ২২ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী চট্টগ্রামস্থ থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদ কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সম্মেলন’। আমার জানা মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখকদের নিয়ে বাংলাদেশে এই প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন। বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিমের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রফেসর হায়াত হোসেন, প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কাসেম এবং প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক। সূচনা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির ফেলো, কবি রাশেদ রউফ। উদ্বোধনী বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য বলেনআজকের সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। পৃথিবীতে পাঠকের চেয়ে লেখকের সংখ্যা বেশী। সাহিত্য হচ্ছে জীবনের দর্পণ, সাহিত্যই একমাত্র ইতিহাস বিকৃতি থেকে বাঁচাতে পারে। আপোষকামিতা লেখকের দায়বদ্ধতা হতে পারে না। অধ্যাপক এলিজাবেথ আরিফা মুবাশশিরার সভাপতিত্বে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যচর্চা’ বিষয়ক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. নুরুল আমিন, আলোচক ছিলেন ড. সেলিম জাহাঙ্গীর, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ. খালেদ হামিদী, প্রফেসর ড. আহমেদ মাওলা, প্রফেসর ড. উদিতি দাশ সোমা, . শ্যামল কান্তি দত্ত, অধ্যাপক বিচিত্রা সেন এবং শাকিল আহমদ। সম্মেলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ‘লেখকের মানসগঠন শীর্ষক কর্মশালা’র আয়োজন। প্রবন্ধের ভাষা ও বিষয় বৈচিত্র্য, গল্পের কলকব্জা, কবিতার নির্মাণ ও নির্মিতি, লেখকের দায় নিয়ে চমৎকারভাবে আলোচনা করেন যথাক্রমে প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ওমর কায়সার এবং সেলিম সোলায়মান। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে লেখক অভীক ওসমানের সভাপতিত্বে অনুবাদে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক জি এইচ হাবীবকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। আলোচক ছিলেন প্রফেসর মুজিব রাহমান, প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার দেব, প্রফেসর ড. আদনান মান্নান, প্রফেসর ড. শারমিন মুস্তারী, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসহাক, অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা এবং অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ। সংবর্ধনা প্রাপ্ত লেখককে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয় এবং তাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক, নগদ সম্মানী এবং সনদপত্র তুলে দেন মঞ্চে উপবিষ্ট সভাপতি সহ অন্যান্য আলোচকেরা। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জি. এইচ. হাবীব বলেন চট্টগ্রাম শহরে এভাবে সম্মানিত হবো আমি কখনো ভাবিনি। প্রচন্ড আবেগ এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন আজ আমি আপনাদের সামনে প্রাণখুলে কথা বলছি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক পরিষদ এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দুই দিনব্যাপী থিয়েটার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রফেসর রীতা দত্তের সভাপতিত্বে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করা হয়। আলোচক ছিলেন মুহাম্মদ মুজিবর রহমান, প্রফেসর ড. মুন্সী আবু বকর, নাসের রহমান, কাজী রুনু বিলকিস, . শামসুদ্দিন শিশির ও অধ্যক্ষ শিমুল বড়ুয়া। দুইদিনের অনুষ্ঠানে ছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ ও কবিতা পাঠের আসর। প্রফেসর ড. প্রণব কুমার চৌধুরী, অধ্যক্ষ তরুণ কান্তি বড়ুয়া এবং অধ্যাপক মৃনালিনী চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে একশো জনেরও অধিক লেখক এ পর্বে অংশগ্রহণ করেন। দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমু, অধ্যাপক কাঞ্চনা চক্রবর্ত্তী এবং কবি ও শিশুসাহিত্যিক ইসমাইল জসীম। সমবেত কন্ঠে ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গান পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিষণ্নতার প্রথম স্তর আলেয়া আরমিন আলো
পরবর্তী নিবন্ধহাজী আবদুল গণি রোড প্রশস্ত ও সংস্কার করা হোক