দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের কোটি মানুষের প্রধান সড়ক চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক। এই ব্যস্ততম মহাসড়কে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে যানজট। সড়কে দুর্ভোগ ও অকাল মৃত্যুর বিষয়ে সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সময় স্মারকলিপি, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করে এই মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা মেলেনি এখনও।
গতকাল ‘চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন আন্দোলন’–এর ব্যানারে ছয় লেনের দাবিতে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া ও চকরিয়া উপজেলায় একই সময়ে অবরোধ কর্মসূচিতে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়ী, চালক, ছাত্র–জনতা ও সাধারণ মানুষ। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে তিন অঞ্চলেই থমকে যায় হাজারো যানবাহন; পায়ে হেঁটে পথ পাড়ি দেওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দূরপাল্লার যাত্রীদের। তবে প্রশাসনের আশ্বাসে কয়েক ঘণ্টা পর অবরোধ উঠলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে আবারও কঠোর আন্দোলনে নামার বার্তা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
লোহাগাড়া : লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে মহাসড়ক ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হয়। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। সকালে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের স্থানে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের উপর বাঁশ আর ব্যানার টাঙিয়ে অবরোধকারীরা অবস্থান করেন। ব্যানারে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করার কথা লেখা ছিল। এ সময় তারা মহাসড়ক ৬ লেনের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দেন। ব্লকেড কর্মসূচিতে ফেস্টুন নিয়ে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও। কর্মসূচির কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ এলাকাজুড়ে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় দূরপাল্লার যাত্রী ও কক্সবাজারমুখী পর্যটকদের। এ সময় অনেক যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতেও দেখা গেছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিমানবন্দরমুখী গাড়ি, পরীক্ষার্থী ও চিকিৎসাসেবাসহ জরুরি সরকারি যানবাহন ব্লকেড আওতার বাইরে ছিল। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের আশ্বাসে ব্লকেড কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন আন্দোলনের সংগঠক এইচ এম তামিম মির্জা জানান, দুই লেনের মহাসড়ক হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সকল অফিসিয়াল কার্যক্রম শেষে আমরা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক প্রশস্তকরণের ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই পূর্বনির্ধারিত সময় বিকাল ৪টার আগে ব্লকেড কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা না গেলে পুনরায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেন ইস্যুতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সমাধানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন।
কেরানীহাট : সাতকানিয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মহাসড়কের সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মহাসড়ক অবরোধের কারণে সড়কে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বিএনপি, জামায়াত, এলডিপি, এনসিপি, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের কর্মীসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করে দুর্ঘটনা রোধসহ পর্যটন নগরী বান্দরবান ও কক্সবাজার যাতায়াতে সহজীকরণ করার দাবি জানানো হয়।
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত বলেন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনের দাবিতে স্থানীয় লোকজন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে কিছু সময়ের জন্য সড়কের কয়েকটি স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
চকরিয়া : চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ৯টা থেকে চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর ওপর ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হয়। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে আটকা পড়ে হাজারো যানবাহন। এই পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটক, যাত্রী সাধারণ। তবে দুপুর ১টার দিকে ব্লকেড কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আজাদীকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী একসপ্তাহের মধ্যে এনিয়ে নির্দিষ্ট করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আন্দোলনকারীদের এই তথ্য জানানোর পর তারা সম্মত হয়েছে দুপুর একটার পরপরই মহাসড়ক থেকে তারা সরে যাওয়ার। এর মধ্য দিয়ে একটার পর থেকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে।
এর আগে ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, কক্সবাজার জেলা পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের এএসপি অভিজিত দাস, চকরিয়া থানার ওসি তৌহিদুল আনোয়ারসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সতর্ক অবস্থান নেয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে রূপান্তরের দাবিতে নিয়ে গত একমাস ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন সাধারণ জনগণ। তারা চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে সর্বশেষ গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন।












