অন্তর্বর্তী সরকার গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধ্যাদেশ ২০২৫–এর খসড়া অনুমোদন করেছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব ভবন ও নির্মাণ কাজের অনুমোদনের জন্য একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের নির্দেশ দেন। বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫–এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান দমনে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধ ও দমন অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। খবর বাসসের।
বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করা যায়, যা দেশের সব স্থাপনা ও নির্মাণ কাজের অনুমোদন দেবে। বর্তমানে রাজউক শুধুমাত্র নিজস্ব এলাকায় অনুমোদন দিতে পারে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নিরাপদ নির্মাণবিধি মানা হচ্ছে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রেস সচিব বলেন, গ্রামাঞ্চলসহ দেশজুড়ে চার থেকে পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে, তবে প্রশ্ন হলো এগুলো জাতীয় ভবন নির্মাণ কোড মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা। এছাড়া ভূমিকম্প ও অগ্নি ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নতুন রাজউক অধ্যাদেশে পুনর্বিকাশ, জমি পুনর্বিন্যাস, খেলার মাঠ, জলাশয় ও প্রাকৃতিক জলাধারের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, জমির মালিক ৬০ শতাংশের সম্মতিতে পুনর্বিকাশ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন অধ্যাদেশে নির্মাণ, জলাশয় খনন, নিচু জমি ভরাট, প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ বাধা, খেলার মাঠ ও উদ্যানের শ্রেণি পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অনুমোদিত নকশা ব্যতীত নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যত্যয়ী স্থাপনা অপসারণের শাস্তি এবং রাজউকের চেয়ারম্যান, সদস্য বা কর্মচারীদের রাজউকের সঙ্গে সংযুক্ত কোনো চুক্তি বা শেয়ারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এদিকে দুদককে আরও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং আগের সরকারের সময়ে বিস্তৃত দুর্নীতি দমন করার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫–এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী কমিশনে পাঁচজন কমিশনার থাকবেন। তাদের মধ্যে একজন নারী এবং অন্তত একজন বা দুইজন আইটি পেশাদার থাকবেন। আইটি পেশাদার অন্তর্ভুক্তির কারণ ব্যাখ্যা করে শফিকুল আলম বলেন, আজকের দুর্নীতি মূলত ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে। ক্যাশলেস সমাজে বড় অঙ্কের অর্থ এক ক্লিকেই স্থানান্তর করা সম্ভব– নগদ টাকার সময় শেষ।
মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধ ও দমন অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মানবপাচার বাংলাদেশের জন্য এখনো একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে নারী ও শিশু এবং আর্থিক প্রতারণা। এটা শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, দেশের ভাবমূর্তির জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর।
প্রেস সচিব জানান, গত সপ্তাহে অঙ্গ পাচারের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিশেষভাবে আলোচনায় আসে। উত্তরাঞ্চলের জেলা–বিশেষত জয়পুরহাট ও বগুড়া থেকে মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন অধ্যাদেশে এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে পৃথক বিধান যোগ করা হয়েছে।












