বন্দরে ১০ হাজারের বেশি নিলামযোগ্য কন্টেনার

সরিয়ে নেয়াটা কর্তৃপক্ষের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ অবকাঠামো, নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক কার্যক্রমে চাপ

হাসান আকবর | শুক্রবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২৫ at ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড ও শেডজুড়ে পড়ে রয়েছে ১০ হাজারের বেশি কন্টেনার। যেগুলো বন্দর ইয়ার্ডের অন্তত এক পঞ্চমাংশ জায়গা দখল করে রেখেছে। বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা এসব কন্টেনার নিলামযোগ্য হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। কিন্তু নানা জটিলতায় এগুলো সরানো যায়নি। বর্তমানে এসব কন্টেনার সরিয়ে নেয়াটা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ এগুলো সরানো গেলে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম অনেক বেশি গতি পেতো বলে সূত্র জানিয়েছে।

বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আটকে থাকা কন্টেনারের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার; যা ১০ হাজার টিইইউএসের বেশি। এর বাইরে আরও সাড়ে চার হাজার আগের ও পরের সময়ের নিলামযোগ্য কন্টেনার বন্দরের ইয়ার্ড দখল করে রয়েছে। প্রশাসনিক বা আইনি জটিলতার নানা কারণে এসব কন্টেনার আটকা পড়ায় আমদানিকারকরা খালাস করেননি। ইতোমধ্যে এসব কন্টেনারে থাকা বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্টও হয়ে গেছে।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, বহু কন্টেনারের বিপরীতে রয়েছে মামলা মোকদ্দমাও। এসব কন্টেনার শুধু বন্দরের জায়গাই দখল করে রাখেনি, একইসাথে বন্দরের অবকাঠামো, নিরাপত্তা এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। বন্দরের ধারণক্ষমতার মাঝে এসব কন্টেনারের জঞ্জাল ক্রমাগত সংকট সৃষ্টি করছে। উক্ত ১০ হাজার কন্টেনার ইয়ার্ডে না থাকলে বন্দরের ইক্যুইপমেন্ট মুভমেন্টসহ সার্বিক কার্যক্রমে আরো অনেক বেশি গতিশীলতা তৈরি হবে বলেও সূত্রগুলো জানায়।

নিলামযোগ্য কন্টেনারগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) . সাখাওয়াত হোসেন জরুরি নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। এরপর কিছু কন্টেনার নিলাম শুরু হলেও দীর্ঘসূত্রতার কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি অনেকটা ঝুলে রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে বর্তমানে ৪০০টির বেশি কেমিক্যালবাহী নিলামযোগ্য কন্টেনার রয়েছে। এর অনেকগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। যা বিস্ফোরণসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করেছে। বছরের পর বছর ধরে বন্দরে পড়ে থাকা কন্টেনারগুলোতে মেশিনারিজ, ফেব্রিঙ, সুতাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব কন্টেনার নিলামে তোলার জন্য কাস্টমস বরাবরে অসংখ্য চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে নিলাম প্রক্রিয়ায় কোনো গতি নেই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা কন্টেনারগুলো বন্দরের সক্ষমতা হ্রাস করছে এবং বিপজ্জনক কেমিক্যালের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। এতে এগুলো সংরক্ষিত মূল্য ছাড়া প্রথম নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে বিক্রয়, দুই নিলামে বিক্রয় না হলে তৃতীয়বার প্রচারপূর্বক সরাসরি বিক্রয় এবং নিলামে নিষ্পত্তিযোগ্য না হলে ধ্বংস বা বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তরের কথা বলা হয়।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, নিলাম প্রক্রিয়া সহজ হওয়া ইতিবাচক। সময়মতো নিলাম না হলে পণ্য নষ্ট হয়, দরদাতার আগ্রহ কমে এবং কাস্টমসও ভালো দাম পায় না। দ্রুত নিলাম সম্পন্ন হলে শিপিং লাইনগুলোও তাদের কন্টেনার দ্রুত ফেরত পাবে এবং পুনরায় ব্যবহার করতে পারবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের নিলাম শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া ছয় হাজারের মতো নিলামযোগ্য কন্টেনারের নিলাম প্রক্রিয়া চলমান। সাম্প্রতিক সময়ে তিন দফা নিলামের মাধ্যমে ৫০৩টি কন্টেনার বিক্রি করা হয়েছে। একটি নিলাম সম্পন্ন করতে অন্তত দুই মাস লাগে, তাই প্রতি মাসে একাধিক নিলাম আয়োজন করা হচ্ছে। কন্টেনারগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আন্তরিক বলেও ওই কর্মকর্তা দাবি করেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, নিলামযোগ্য ১০ হাজার কন্টেনার বছরের পর বছর জায়গা দখল করে আছে। এগুলো ধ্বংস বা খালাসের দায়িত্ব কাস্টমসের। জায়গা দ্রুত খালি করতে আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়েছি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, বছরের পর বছর জমে থাকা কন্টেনারগুলো এখন বন্দরের সক্ষমতা ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিলাম প্রক্রিয়ায় গতি না এলে কন্টেনারের ধকল থেকে বন্দর মুক্তি পাবে না। তারা একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে আটকে থাকা কন্টেনারগুলোর ব্যাপারে দিনে দিনে সিদ্ধান্ত এবং তা কার্যকর করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়কে প্রাণ গেল কিশোর, এসআইসহ তিনজনের
পরবর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়া সিসিইউতে আজ দেশব্যাপী দোয়ার আয়োজন