সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিততে হলো মোহামেডানকে। পেনাল্টিতে এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনও পেনাল্টি পায়। তারা মিস করে। এরপর আরো দুই গোল দিয়ে তিন গোলে এগিয়ে গেল মোহামেডান। ৭৪ মিনিট থেকে গোল শোধ করা শুরু করলো সিটি কর্পোরেশন। খেলা শেষের খানিক আগে ইনজুরি টাইমে খেলায় সমতা (৩–৩) নিয়ে এলো সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেনি তারা। ঘাম ঝড়িয়ে মোহামেডান টাইব্রেকারে জিতে মেয়র চ্যালেঞ্জ কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে যায়। সিজেকেএস ক্লাব সমিতি আয়োজিত মেয়র চ্যালেঞ্জ কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মোহামেডান স্পোর্র্টিং ক্লাব টাইব্রেকারে ৩–১ গোলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একাদশকে পরাজিত করে। নির্ধারিত সময়ের এই খেলা ৩–৩ গোলে ড্র ছিল। টুর্নামেন্টের প্রাথমিক পর্বে এই দু’দলের সাক্ষাতে মোহামেডানকে ২–১ গোলে হারিয়ে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একাদশ। সেমিফাইনালে সেই জয়ের পুনরাবৃত্তি করতে পারেনি অফিস দলটি। চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই খেলাটি শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় ছিল। খেলার ৭ মিনিটে কর্ণার থেকে বক্সে আসা বলে মোহামেডানের মিজানুরের পাওয়ার শট সিটি কিপার ইমনের হাতে যায়। ১৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে মোহামেডান খেলায় এগিয়ে যেতে সমর্থ হয়। বক্সে ঢুকে যাওয়া নকিকে টেনে ফেলে দেন সিটি রক্ষণভাগ। রেফারী সাইমন সানি পেনাল্টির বাঁশি বাজান মোহামেডানের পক্ষে। তা থেকে মোহাম্মদ আশিক গোল করে মোহাডোনকে ১–০ গোলে এগিয়ে রাখেন। ২৭ মিনিটে মোহামেডান আক্রমনে উঠে। তাওহীদুলের সেন্টারে নকির শট সাইডবার ঘেঁষে চলে যায়। ৩৭ মিনিটে মোহামেডানের সাকিব চৌধুরীর একটি শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়। ৪৩ মিনিটে গোল শোধের দারুন সুযোগ আসে সিটি কর্পোরেশনের কাছে। বক্সে হ্যান্ডবল হয় মোহামেডানের খোরশেদ আলমের। রেফারী পেনাল্টি দেন সিটির পক্ষে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের সিরাজুল ইসলাম রানার বাঁ পায়ের শট মোহামেডান কিপার হাসান ঠেকিয়ে দেন। সমতা ফেরাতে ব্যর্থ হয় সিটি। এক গোলে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নামে মোহামেডান। শুরুতেই আক্রমণে উঠে সিটি। মোহামেডান ডিফেন্ডার প্রকাশ দাশের ভুলে বল কেড়ে নেন সিটির বদলি আবদুর রহিম। কিন্তু তিনি বলটি উপরে মেরে নষ্ট করেন সুযোগ। দু’মিনিট বাদে কাউন্টার এট্যাকে মোহামেডান আক্রমণভাগ জালে বল ঠেলে দিতে পারেনি। পাঁচ মিনিট পরে মোহামেডানের নকির কর্ণার থেকে তাওহীদুলের হেড বারে লেগে ফিরে আসে। ৬০ মিনিটে গোলসংখ্যা দ্বিগুন করে মোহামেডান। নকির কর্ণার থেকে অধিনায়ক আকতারুজ্জামানের দুর্দান্ত হেড সিটি কিপার ইমনকে পরাস্ত করে (২–০)। ৬৭ মিনিটে আবারো গোল পায় মোহামেডান। এবার নকির সেন্টার থেকে বক্সে বল পেয়ে সাকিব চৌধুরী গোল করে (৩–০)। তিন গোলে এগিয়ে থাকা মোহামেডানকে খেলার ৭৪ মিনিট থেকে হতবাক করে দিতে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। আক্রমনে থাকা সিটির কয়েকজনের পা ঘুরে বল বক্সে পান বদলি আবদুর রহিম। তিনি প্লেসিং শটে বল জালে দিলে ব্যবধান কমে (৩–১)। ৮৪ মিনিটে মোহামেডানের মেজবাহর ফ্রি কিক সিটি কিপার ইমন ফিস্ট করে রক্ষা করেন। পর মুহূর্তে পাল্টা আক্রমনে ওঠা সিটি কর্পোরেশন গোল পায়। মোবারক থেকে বল পেয়ে বদলি রুবায়েত হোসেন বল জালে প্রবেশ করিয়ে দেন (৩–২)। উজ্জীবিত সিটি কর্পোরেশন এসময় খেলায় সমতা আনতে মরিয়া হয়ে উঠে। ইনজুরি টাইমে সে সুযোগ কাজে লাগায় তারা। কর্নার থেকে মোহামেডান রক্ষণভাগে কিছুটা জটলার সৃষ্টি হয়। কয়েক পা ঘুরে আসা বল পান সিরাজুল ইসলাম রানা। তিনি শটে বল জালে জড়িয়ে দিলে খেলায় সমতা চলে আসে (৩–৩)। এই ফলাফলেই খেলার নির্ধারিত সময় শেষ হলে হতভম্ব হয়ে পড়ে মোহামেডান। এরপর খেলার ফলাফল নির্ধারণের জন্য সরাসরি টাইব্রেকারে যান রেফারী। তবে মোহামেডানের খেলোয়াড়রা মাথা ঠান্ডা রাখেন। মোহামেডানের পক্ষে মোহাম্মদ আশিক,প্রকাশ দাশ এবং নকি চন্দ্র দাস প্রত্যেকেই সুন্দর শটে গোল করেন। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে শাদমান আলম কেবল গোল করতে সমর্থ হন। সিটির আবদুর রহিমের শট মোহামেডান কিপার শওকত হোসেন হাসান সেভ করেন।
জালাল উদ্দিনের শট গোলকিপারের হাত থেকে বারে লেগে ফিরে আসে। আমানুল্লাহ সোহানের শট বারের উপর দিয়ে গেলে উল্লাসে মেতে উঠেন মোহামেডান দলের খেলোয়াড়–কর্মকর্তা এবং সমর্থকরা। গতকাল ম্যান অব দা ম্যাচ নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম মোহামেডান স্পোর্র্টিং ক্লাবের গোলকিপার মো. শওকত হোসেন হাসান। খেলা শেষে তার হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট এবং নগদ ২,০০০ টাকা তুলে দেন চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম, সিজেকেএস ক্লাব সমিতির সদস্য প্রবীণ কুমার ঘোষ, ফজলে রাব্বি সাজ্জাদ ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবদুল আহাদ রিপন। আজ ২৬ নভেম্বর বুধবার, দুপুর ২.৩০ টায় চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ব্রাদার্স ইউনিয়ন এবং এস এ ফ্যামিলি স্পোর্টস ক্লাব।












