বিশ্বের প্রথম জিন থেরাপি, সুস্থ বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু

বিস্মিত চিকিৎসকরাও

| মঙ্গলবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিরল জিনগত রোগ ‘হান্টার সিনড্রোম’এ আক্রান্ত তিন বছর বয়সী এক শিশুর দেহে পরীক্ষামূলকভাবে জিন থেরাপি প্রয়োগ করে চমক দেখিয়েছেন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ছোট্ট অলিভার চু এই যুগান্তকারী চিকিৎসা পাওয়া প্রথম রোগী। চিকিৎসা শুরু হওয়ার এক বছর পরে সে এখন প্রায় স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে, যা চিকিৎসকরা কল্পনাও করেননি। খবর বিডিনিউজের।

হান্টার সিনড্রোম’ বা এমপিএস২ নামের এই বিরল ও বংশগত রোগের প্রভাবকে অনেক সময় ‘চাইল্ডহুড ডিমেনশিয়া’ বা শিশুদের স্মৃতিভ্রমের ধরন হিসেবেও বর্ণনা করা হয়। ত্রুটিপূর্ণ জিনের কারণে রোগীরা এমন একটি এনজাইম উৎপাদন করতে পারে না, যা কোষকে সুস্থ রাখতে অত্যন্ত জরুরি। রোগটিতে আক্রান্তদের শরীর ও মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। রোগের তীব্রতায় রোগীরা সাধারণত ২০ বছর বয়সের আগেই মারা যায়।

মানচেস্টারের রয়্যাল চিলড্রেনস হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিশ্বে প্রথম জিন থেরাপি ব্যবহার করে ৩ বছরের শিশু অলিভারের কোষ পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি থামানোর চেষ্টা করেছেন। এই ট্রায়ালে নেতৃত্বে সহযোগিতা করা অধ্যাপক সাইমন জোন্স বলেন, আমি ২০ বছর ধরে এমন একজন শিশুর অগ্রগতি দেখার অপেক্ষা করছিলাম। অলিভারের এই উন্নতি সত্যিই আনন্দদায়ক।

বিশ্বজুড়ে মোট পাঁচটি ছেলেকে এই ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে অলিভার প্রথম। ক্যালিফোর্নিয়ার চু পরিবার এই চিকিৎসায় ভরসা রেখেছেন। অলিভারের চিকিৎসা শুরু হওয়ার এক বছর পর তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এখন স্বাভাবিকের দিকে ফিরে এসেছে। তার মা জিংরু বলেন, প্রতিবার এই বিষয়ে কথা বলার সময় কাঁদতে ইচ্ছে হয়, কারণ, এটি সত্যিই আশ্চর্যজনক।

বিবিসি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অলিভারের এই চিকিৎসার বিষয়টিতে নজর রেখেছিল। কীভাবে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো এই যুগান্তকারী জিন থেরাপি তৈরি করেছিলেন এবং কীভাবে চিকিৎসা ট্রায়ালটি আর্থিক তহবিলের অভাবে প্রায় শুরুতেই ব্যর্থ হওয়ার মুখে পড়েছিল সবই দেখা হয়েছে। অলিভারের চিকিৎসা শুরু হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। তার রক্ত থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয় এবং লন্ডনের গ্রেট অর্মন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের ল্যাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। জিন থেরাপির মাধ্যমে তার কোষে এনজাইম উৎপাদনের জন্য ত্রুটিপূর্ণ জিনের জায়গায় সঠিক জিন প্রবেশ করানো হয়। বিশেষভাবে তৈরি এই জিন মস্তিষ্কেও পৌঁছাতে পারে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অলিভারের শরীরে প্রক্রিয়াজাত স্টেম সেলগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মাত্র কয়েক মিনিটের ইনফিউশনের মাধ্যমে তার চিকিৎসা সম্পন্ন হয়। এরপর ম্যানচেস্টার এবং ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসকরা তার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। মে মাসে পরীক্ষা করা হলে দেখা যায়, অলিভার গতিশীল ও আরও জিজ্ঞাসু হয়ে উঠেছে। তার ভাষা ও চলাফেরার উন্নতি হয়েছে।

বিশেষ করে, এখন সে নিজেই হারানো এনজাইম তৈরি করতে সক্ষম। অলিভারের বড় ভাই স্কাইলারও হান্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত। যদিও অলিভারের মতো সম্পূর্ণ চিকিৎসা স্কাইলারের জন্য এখনও সম্ভব নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে একই থেরাপি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই ট্রায়ালের জন্য ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার ও ব্রিটিশ চ্যারিটি লাইফআর্ক ১৫ বছরের গবেষণা ও অর্থায়ন দিয়েছে। যে পাঁচজন ছেলেকে এই ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে। অলিভার এখন প্রতিমাসে পরীক্ষার জন্য ম্যানচেস্টারে ফিরে আসে এবং চিকিৎসকরা দুই বছরের জন্য তাদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রফেসর জোন্স বলেন, অলিভার এখন শতাধিক গুণ বেশি এনজাইম তৈরি করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সে শিখছে, নতুন শব্দ ও দক্ষতা অর্জন করছে এবং সহজে চলাফেরা করছে।

অলিভারের পরিবার চিকিৎসকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা বলেন, আমাদের সন্তানদের জন্য এ এক নতুন জীবন। অলিভারের জীবন এখন সুস্থ, আনন্দময় ও পূর্ণ বিকাশের পথে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে আশরাফ ফকিরের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা
পরবর্তী নিবন্ধপরীর পাহাড়ে রাত ৭টায় স্ট্রিট লাইট না জ্বলার অভিযোগ