বাড়ছে ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগ,ঝুঁকিতে বয়স্ক ও শিশুরা

হাসপাতালে ভিড়, সচেতন থাকার পরামর্শ

জাহেদুল কবির | সোমবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃতিতে এখন চলছে ঋতু বদলের সন্ধিক্ষণ। ভোররাতে থেকে সকাল পর্যন্ত শীতের অনুভূতি। মধ্য দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত উষ্ণ আবহাওয়ায় গরমের অনুভূতির কারণে ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগব্যাধিও বাড়ছে। বিশেষ করে সাধারণ ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষ। এছাড়া শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। এছাড়া বৃদ্ধরা কাশির সাথে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের নিয়মিত টিকাদান, স্বাস্থ্যকর জীবন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, এই তিনটি বিষয় নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে শিশুর মাথায় হালকা টুপি এবং হাতেপায়ে মোজা পরাতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। এখন যেহেতু পুরোপুরি শীত ও আবার গরম না, তাই আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিশু ও বৃদ্ধদের যত্ন নিতে হবে। কোনোভাবেই আগুনের ধোঁয়া জাতীয় কিছু দিয়ে শিশুর শরীরে উষ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করা যাবে না। ঘরের বাইরে গেলে বড়দের যে পরিমাণ শীতের কাপড় প্রয়োজন হয়, শিশুকেও যেন একই ধরনের কাপড় পরানো হয়। খুব বেশি যাতে পরানো না হয়। অন্যদিকে শীতের সময় বয়স্কদেরও বাড়তি যত্ন নিতে হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এর এক তৃতীয়াংশ আবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী। একইসাথে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়ছে চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালেও। অন্যদিকে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে বাড়ছে ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্তের হার।

চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এএসএম জাহেদ আজাদীকে বলেন, প্রতি বছর শীত পুরোপুরি আসার আগে সর্দি, কাশি ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। বয়স্করা এ সময় শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। চমেক হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে এই সময়ে রোগী ভর্তির হারও বেড়ে যায়।

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও অ্যাজমা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আমাদের দেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। সাধারণত যেসব শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের নিউমোনিয়া বেশি হয়। এছাড়া প্রিম্যাচিউরড (সময়ের আগে জন্ম নেওয়া) শিশুদেরও নিউমোনিয়া বেশি হয়। ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিজনিত কারণেও নিউমোনিয়া হয়। এখন নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে হলে গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে গর্ভকালীন মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া স্বল্প বিরতিতে সন্তান জন্ম দিলেও সেই সন্তানের ওজন কম হতে পারে। মাবাবা কেউ ধূমপায়ী হলে সন্তানের নিউমোনিয়া হতে পারে। পর্যাপ্ত আলোবাতাস ছাড়া স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশু নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেঁজুতি সরকার আজাদীকে বলেন, বছরের এই সময়টাতে বিশেষ করে ছোট শিশুদের রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। সাধারণ ফ্লু ভাইরাসের বাইরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা পেতে অভিভাবকদের সচেতন হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকরা বেশি অসচেতন। তারা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের দিয়ে শিশুর চিকিৎসা করান, অথবা একেবারেই করান না। যখন শিশুর অবস্থার অবনতি হয় তখন হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করেন। তাই অভিভাবকদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভুয়া ব্যক্তিকে বন্ধকদাতা সাজিয়ে জাল দলিল, আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ!
পরবর্তী নিবন্ধহাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে ফের চিঠি দেওয়া হয়েছে