অনিশ্চয়তায় তিন ইউনিয়নের ১৭০০ একর জমির চাষবাস

মাতামুহুরীর শাখা খাল নলবিলা ভরাট

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ২২ নভেম্বর, ২০২৫ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বেশ কয়েকবছর ধরে একনাগাড়ে ভরাট হতে হতে একেবারে সংকুচিত হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর শাখা ‘নলবিলা ছড়া’। এতে মাতামুহুরী নদী থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে ছড়াটিতে। এই অবস্থায় চলতি শুষ্ক মৌসুমে মিঠা পানির সংস্থান না হওয়ায় তিন ইউনিয়ন কাকারা, লক্ষ্যারচর ও কৈয়ারবিলের অন্তত ১৭০০ একর জমিতে চাষাবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কয়েকশত কৃষক। তাই অতিসত্বর এই নলবিলা ছড়া খালটির কয়েক কিলোমিটার খননপূর্বক মিঠা পানির প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এসব ইউনিয়নের কৃষকেরা।

সরজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষায় অতি বৃষ্টি এবং পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলিমাটি। সেই পলিতে মাতামুহুরী নদীর তলদেশ এবং বিভিন্ন শাখাপ্রশাখা খালেও নেমে পড়ে। একইভাবে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত একমাত্র নলবিলা ছড়াও দীর্ঘদিন ধরে ভরাট হয়ে পড়েছে। এতে ছড়াটিতে পানির প্রবাহ বন্ধ থাকায় কাকারা ইউনিয়ন এবং লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের সাকের মোহাম্মদ চর, বার আউলিয়া নগর ও শাহ ওমর নগর এলাকার বিপুল পরিমাণ চাষের জমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। একই কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের পাশের বিশাল বিলের কৃষি জমি সেচ সুবিধার অভাবে কয়েকবছর ধরে চাষাবাদ করা যাচ্ছে। এই অবস্থায় ভাটির অংশ একেবারে শুকিয়ে যাওয়ায় কৈয়ারবিল ইউনিয়নের একটি বিপুল পরিমাণ জমিও চাষাবাদের আওতায় আসবে না চলতি শুষ্ক মৌসুমে।

ছুরত আলম, কফিল উদ্দিনসহ তিন ইউনিয়নের ভুক্তভোগী একাধিক কৃষকের ভাষ্যমতে, মাতামুহুরী নদীর শাখা নলবিলা ছড়াটি পলিমাটিতে ভরাট হয়ে থাকায় লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের দুই ইউনিয়ন কৈয়ারবিল ও কাকারা ইউনিয়নের ১৭০০ একর জমিতে চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্য ঘাটতি ঠেকাতে নলবিলা ছড়াটির কয়েক কিলোমিটার খনন করে মিঠা পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আবেদন জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি ছড়াটি খননে। এতে এসব জমিতে চলতি শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ করতে পারবেন কী না তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নূর মোহাম্মদ মানিক বলেন, নলবিলা ছড়াটি একসঙ্গে লক্ষ্যারচর, কাকারা ও কৈয়ারবিলসহ তিনটি ইউনিয়নের সংযোগস্থল। একসময় এই ছড়ার পানি সুবিধা নিয়ে তিন ইউনিয়নের কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমে নিরবচ্ছিন্নভাবে চাষাবাদ করতো। কিন্তু দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে নলবিলা ছড়াটি ভরাট হয়ে পড়ার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা চাষাবাদ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তিন ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি জলাবদ্ধতা এবং পানি নিষ্কাশন সুবিধার অভাবে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। তাই কৃষকদের দুর্দশা লাঘবে নলবিলা ছড়াটি খনন করা একেবারে জরুরি হয়ে পড়েছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, ভরাট থাকা নলবিলা ছড়া ও জালিয়ার ছড়া খননের বিষয়ে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ছড়া দুটি খননে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বিএডিসির কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বিএডিসি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চকরিয়া উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাল দুটি খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত পরবর্তী দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপর ছড়া দুটি খননের কাজ শুরু করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩৬৭ রানে এগিয়ে থেকে চালকের আসনে বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধমসজিদে ক্ষমা চেয়ে মাদক ব্যবসা ছাড়ার ঘোষণা দিলেন রাঙ্গুনিয়ার ‘জলইক্যা’