ইতিহাস বিকৃতি থেকে বাঁচাতে পারে সাহিত্যিকদের লেখনী শক্তি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সম্মেলন উদ্বোধনীতে উপাচার্য

চবি প্রতিনিধি | শনিবার , ২২ নভেম্বর, ২০২৫ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদের উদ্যোগে প্রথম লেখক সম্মেলন গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিকেলে সম্মেলন উদ্বোধন করেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার। প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন প্রফেসর ড. হায়াত হোসেন, প্রফেসর ড. মো. আবুল কাসেম, প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক। সূচনা বক্তব্য দেন কবি সাহিত্যিক রাশেদ রউফ। বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্যে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার বলেন, আমার ৪১ বছরের শিক্ষকতা জীবনে চট্টগ্রাম শহরের কোনো সাহিত্য সংগঠন আমাকে লেখক হিসেবে কখনো দাওয়াত দেয়নি। এই প্রথম দাওযাত পেলাম। আমি মনে করি পাঠকের চেয়ে লেখক বেশি। এরকম কর্মশালা সম্মেলন একজন লেখককে আরো বেশি সমৃদ্ধ করে। সাহিত্যকে আমরা বলছি জীবনের দর্পণ, জাতির দর্পণ। সাহিত্যকে একজায়গায় বন্দী করা যায় না। কবি সাহিত্যিকদের মনে রাখতে হবে ইতিহাসকে বিকৃত করা যাবে না, সমাজের নির্মম বাস্তবতা লেখার মাধ্যমে কবি সাহিত্যিকদের তুলে ধরতে হবে। আপসকামিতা লেখকদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। নিজেকে নিরাপদ লেখক হিসেবে শুধু লিখলে হবেনা। সমাজের শোষণ,বঞ্চণাসহ বাস্তবিক চিত্র তুলে ধরতে হবে। সভার সভাপতি প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম বলেন, আপনি কবি, সাহিত্যিক, লেখক যাই হোন না কেন আপনাকে সমাজ বাস্তবতাকে তুলে ধরতে হবে।

প্রফেসর হায়াত হোসেন বলেন, আমি বেশিরভাগ সময় নিজেকে আড়ালে রাখতাম। সবাই বলে আমার মধ্যে প্রতিভা আছে। আসলে আমার কি রকম প্রতিভা আছে তা আমি মোটামুটি জানি। আর জানি বলে শিক্ষাজীবনে আমি সফল ও শিক্ষকতা জীবনে চেষ্ঠা করেছি নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে শিক্ষকতা পেশা বহমান রাখতে।

প্রফেসর ড. মো. আবুল কাসেম বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক পরিষদের উদ্দেশ্যগুলো মহৎ ও সৃজনশীল। আশা করি কর্মপরিকল্পনা ভবিষ্যত লেখক সৃষ্টি গবেষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে নিরলস ভুমিকা পালন করবে। প্রফেসর ড. আনোয়ারুর হক বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদের আজকের সম্মলনে আসা আমার নিজের দাযবদ্ধতা মনে করেছি। বিশেষ করে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্‌হান থেকে অনেক দায়বদ্ধ।

এরপর ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যচর্চা’ বিষয়ে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রফেসর ড. নুরুল আমিন। অধ্যাপক এলিজাবেথ আরিফা মুবাশশিরার সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন ড. সেলিম জাহাঙ্গীর, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ, খালেদ হামিদী, প্রফেসর ড. আহমেদ মাওলা, প্রফেসর ড. উদিতি দাশ সোমা, . শ্যামল কান্তি দত্ত, অধ্যাপক বিচিত্রা সেন, শাকিল আহমদ। সূচনা বক্তব্য দেন নিজামুল ইসলাম সরফী। মূল প্রবন্ধে ড. নুরুল আমিন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত পণ্ডিত ও বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯৫৬৫৭ সনে তিনি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যক্ষ পদে সমাসীন ছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, তখন তিনি তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী হাবিবুর রহমান সাহেবের সমীপে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শের অনুকরণে চট্টগ্রামে প্রদেশের তৃতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন। উক্ত প্রস্তাবের সপক্ষে তিনি যে সমস্ত যুক্তিতর্কের অবতারণা করেছিলেন সেগুলো এখনও বলবৎ এবং বৈধ রয়েছে। তাঁর মতে, চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বার্মা, মালয়, সিংহল, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, চীন এবং দূরপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মুসলিম শিক্ষার্থীরা এখানে সমবেত হয়ে জ্ঞানের সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে পারবে। অধিকন্তু, অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রম্য নিকেতন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই চট্টগ্রাম নগরীতে বিশ্বের সকল দেশের মানুষ অতি সহজেই আকাশ, স্থল এবং জলপথে যাতায়াত করতে সমর্থ হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এতো বছর পার হলেও বলা যাবে না, . মুহম্মদ শহীদুল্লাহর স্বপ্ন কিংবা ভিশন পূরণ হয়েছে। এছাড়া সকাল সাড়ে ৯টায় ছিল লেখক কর্মশালা। এতে আলোচক ছিলেন প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ওমর কায়সার ও সেলিম সোলায়মান। সন্ধ্যায় ছিল কবিতা পাঠ ও স্মৃতিচারণ। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. প্রণব কুমার চৌধুরী।

আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় থাকবে কবিতা পাঠ ও স্মৃতিচারণ। সন্ধ্যায় ৫.৩০টায় থাকবে অনুবাদে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক জি এইচ হাবীবএর সংবর্ধনা। লেখক অভীক ওসমানের সভাপতিত্বে আলোচক থাকবেন প্রফেসর মুজিব রাহমান, প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার দেব, প্রফেসর ড. আদনান মান্নান, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শেখ সাদী, প্রফেসর ড. শারমিন মুস্তারী, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসহাক, অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা, অধ্যাপক শাহনাজ সিঁথি, অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ। সন্ধ্যা ৬.৩০টা থাকবে লেখক কর্মশালার সনদ বিতরণ। প্রফেসর রীতা দত্তের সভাপতিত্বে আলোচক থাকবেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান, প্রফেসর ড. মুন্সী আবু বকর, নাসের রহমান, কাজী রুনু বিলকিস, . শামসুদ্দিন শিশির, কায়েস চৌধুরী, অধ্যক্ষ শিমুল বড়ুয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাংবাদিক পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে অপহরণ, অবশেষে গ্রেপ্তার ৬
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে ভেন্টিলেটর ভেঙে চুরি