চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ অংশে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে স্থাপিত রাম্বল স্ট্রিপগুলোর সাদা রঙ (সাংকেতিক চিহ্ন) মুছে গেছে। ফলে চালকরা গতিরোধকগুলো টের না পেয়ে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। যা দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সড়কটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, গত ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কে চুনতি ইউনিয়নের দুর্ঘটনার হট স্পট জাঙ্গালিয়া এলাকায় তিন সড়ক দুর্ঘটনায় নারী–শিশুসহ ১৬ জনের প্রাণহানি ও ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়ার আধা কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৭ স্থানে ও একই ইউনিয়নের হাজি রাস্তার মাথা এলাকায় ২ স্থানে স্থাপন করে রাম্বল স্ট্রিপ। কিন্তু গত বর্ষায় বৃষ্টিতে গতি নিয়ন্ত্রণে স্থাপিত অনেকগুলো রাম্বল স্ট্রিপ বিলীন হয়ে গেছে। মুছে গেছে গতিরোধকের উপর ও আগে–পরে দেয়া সাংকেতিক চিহ্ন (রঙ)। যার ফলে বেপরোয়া গতিতে চলছে যানবাহন। এতে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গত ১৬ নভেম্বর চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকায় দ্রুতগতির একটি বাইক গতিরোধকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে সাকিবুল হাসান (২৫) নামে এক পর্যটক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সরজমিনে দেখা যায়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যানবাহনের গতিরোধে স্থাপিত ‘রাম্বল স্ট্রিপ’ কিছু কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। মুছে গেছে সাংকেতিক চিহ্নও (রঙ)। গতিরোধকের অস্তিত্ব বুঝতে না পেরে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায়ও বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলতে গেছে। পুনরায় ওইসব এলাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, দুর্ঘটনার হটস্পট জাঙ্গালিয়ায় লোক দেখানো গতিরোধক ‘রাম্বল স্ট্রিপ’ স্থাপন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়সারা কাজ করছেন। বৃষ্টিপাতে মহাসড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে স্থাপিত রাম্বল স্ট্রিপগুলোর সিংহভাগ অংশ বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশগুলোতে নেই কোনো সাংকেতিক চিহ্ন। এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে টেকসই উপকরণ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।
স্থানীয় মোহাম্মদ সোহাগ মিয়া জানান, মহাসড়কে এমনিতেই গাড়ির গতি থাকে বেশি। এজন্য ইচ্ছে করলেই খুব দ্রুত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের চুনতি অংশে যেসব গতিরোধক আছে, সেগুলোর অধিকাংশের সাদা রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা নেই। তাই খুব কাছ থেকেও এসব গতিরোধক দেখা যায় না। এছাড়া অপ্রশস্ত সড়ক, বিপদজনক বাঁক, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, অপ্রশিক্ষিত চালক, লবন পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল, গাড়ির এলইডি হেডলাইটের আলো, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচল, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচল ও সড়কে দু’পাশে অসমান অংশসহ কয়েকটি কারণে এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটন নগরী কঙবাজার আসেন পর্যটকরা। দূর–দূরান্ত থেকে আসা চালকদের এই সড়কের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার সাবেক সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর জানান, মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে স্থাপিত রাম্বল স্ট্রিপগুলোর সিংহভাগ এক বর্ষায় বিলীন হবার পাশাপাশি মুছে গেছে সাংকেতিক চিহ্ন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে এসব রাম্বল স্ট্রিপগুলো স্থাপনের কাজ করেছেন। যা খুবই দুঃখজনক। দ্রুত রাম্বল স্ট্রিপগুলো পুনরায় সংস্কার পূর্বক রঙ দিয়ে চিহ্নিত দেয়া জরুরি। অন্যথায় আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ–সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ জানান, শ্রীঘ্রই রাম্বল স্ট্রিপগুলো সংস্কার পূর্বক রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়া হবে।












