রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানি যমুনা অয়েল কোম্পানি ১০ মাসের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য কক্সবাজারে পিকনিক আয়োজন করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারির ১০ ও ১১ তারিখ প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবার কক্সবাজারে পিকনিকের আয়োজন করেছিল। বছরের দ্বিতীয় পিকনিকেও গতকাল তারা কক্সবাজারে গেলেন। প্রথমবার ব্যয় হয়েছিল ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৯০০ টাকা। গতকাল থেকে শুরু হওয়া এবারের দুদিনব্যাপী পিকনিকে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৭০০ টাকা। গতবারও তারা উঠেছিলেন জ্বালানি তেল বাংকারিং ব্যবসায়ী আবুর মালিকানাধীন হোটেল সী ওয়ার্ল্ডে। এবারও একই হোটেলের প্রায় পুরোটা বুকিং দেয়া হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের বছরে দুইবার পিকনিক করা নিয়ে খোদ কোম্পানির ভেতরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
যমুনা অয়েল এমপ্লয়িজ রিক্রিয়েশন ক্লাব আয়োজিত এ পিকনিকের সমুদয় ব্যয় কোম্পানির তহবিল থেকে হয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কোষাগারের অর্থে বছরে একাধিকবার পিকনিক আয়োজন নিয়মবহির্ভূত ও অযৌক্তিক। নিয়ম অনুসারে বার্ষিক আয়োজন বছরে একবার সীমাবদ্ধ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত ভ্রমণ ও বিনোদনে জনগণের অর্থ ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পিকনিকের সিডিউল অনুযায়ী, গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় নগরীর আগ্রাবাদ যমুনা ভবন থেকে পিকনিক দলের যাত্রা শুরু হয়। অংশগ্রহণকারীদের জন্য কঙবাজারের বিলাসবহুল হোটেল সী ওয়ার্ল্ডে রুম বুক করা হয়েছে, যেখানে চট্টগ্রাম অফিস, টার্মিনাল বিভাগ এবং অস্থায়ী জনবলসহ মোট ১৬৭ জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৬৭ জনের জন্য রুম নেয়া হলেও গত রাতে কঙবাজারে খবর নিয়ে জানা গেছে, ১০০ জনের মতো কর্মকর্তা–কর্মচারী পিকনিকে যোগ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের জন্য চারটি উপ–কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, বার্ষিক বিচিত্রানুষ্ঠান, হোটেল ব্যবস্থাপনা, বিচ ফুটবল আয়োজন এবং পরিবহন দায়িত্ব উপ–কমিটি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সচিব শাহিনা সুলতানা একজন সাংবাদিককে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। যমুনা অয়েল এমপ্লয়িজ রিক্রিয়েশন ক্লাবের সভাপতি হাসান ইমামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তিনি পিকনিকের কারণে কঙবাজারে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনোদনের নামে এ ধরনের অপচয় জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে ঘটছে। রাষ্ট্রীয় তহবিলের অর্থ নিয়মিত ব্যক্তিগত সুবিধায় ব্যবহারের প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। আর জ্বালানি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তা আরো প্রকট।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। সরকার পরিবর্তন হলেও সরকারি টাকার অপচয়ের সংস্কৃতি বদলায় না, বরং সময়ের সঙ্গে তা আরো বিস্তৃত হচ্ছে। এই প্রবণতা দেশের জন্য ক্ষতিকর।












