দিনের শুরুতেই এলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য দারুণ কাঙ্ক্ষিত একটা মুহূর্ত। শততম টেস্টে শতরান করে ইতিহাসে নিজেকে অমর করে রাখলেন মুশফিকুর রহিম। আবার মুশফিকময় টেস্টের আড়াল সরিয়ে দ্যুতিময় সেঞ্চুরির আলো ছড়ালেন লিটন কুমার দাসও। এরপর বাংলাদেশের বড় স্কোরের পর স্পিনের সামনে আইরিশ ব্যাটিংয়ের ভোগান্তি। মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৪৭৬ রানে। আয়ারল্যান্ড দিন শেষ করে ৫ উইকেটে ৯৮ রানে।
শততম টেস্টে ৯৯ রানে প্রথম দিন শেষ করা মুশফিক প্রত্যাশিত শতরান ছুঁয়ে আউট হয়ে যান ১০৬ রানে। ত্রয়োদশ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতকের রেকর্ডে স্পর্শ করেন তিনি মুমিনুল হককে। বাংলাদেশের টেস্টে ইতিহাসে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৩টি করে সেঞ্চুরি আছে মুমিনুল ও মুশফিকের। পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরিতে লিটন করেন ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ১২৮ রান।
সকালে প্রথম ওভারটি কেটে যায় কিছুটা নাটকীয়তা আর কিছুটা উৎকণ্ঠার মিশেলে। ম্যাথু হামফ্রিজের করা ওভারে কোনো রান নিতে পারেননি মুশফিক। এর মধ্যে একটি ছিল জোরালো আবেদন, আরেকটিতে দুর্দান্ত টার্নিং ডেলিভারিতে তিনি রক্ষা পান অল্পের জন্য। তবে অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়নি খুব একটা। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই শতরান ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। ছোট্ট এক তালিকায় নিজের নাম খোদাই করেন তিনি কিংবদন্তিদের সঙ্গে। টেস্ট ম্যাচের সেঞ্চুরিতে রানের সেঞ্চুরি করা একাদশ ক্রিকেটার তিনি। পরের বলেই চার মেরে ফিফটিতে পৌঁছে যান লিটন। আগের দুটি শতরানকে মুশফিক রূপ দিয়েছিলেন দেড়শ ছাড়ানো ইনিংসে। এবার তেমন কিছু পারেননি। আয়ারল্যান্ড স্পিনার ম্যাথু হামফ্রিজের বলে দ্বিতীয় স্লিপে অধিনায়ক এন্ডি বলবির্নিকে ক্যাচ দেন তিনি। তার ২১৪ বলে ১০৬ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল ৫টি।
এদিকে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের জোড়া সেঞ্চুরির পর বাংলাদেশ বোলারদের নৈপুণ্যে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের দ্বিতীয় দিন ফলো–অনের শঙ্কায় পড়েছে সফরকারী আয়ারল্যান্ড। ৫ উইকেট হাতে নিয়ে এখনও ৩৭৮ রানে পিছিয়ে তারা। ফলো–অন এড়াতে আরও ১৭৮ রান করতে হবে আয়ারল্যান্ডকে। লিটনের সাথে পঞ্চম উইকেটে ২১০ বলে ১০৮ রান যোগ করেন মুশি। টেস্টে সপ্তম শতরানের জুটিও তাদের। যা বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ।
দলীয় ৩১০ রানে মুশফিক ফেরার পর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে আরও একটি শতরানের জুটি গড়েন লিটন। এই জুটিতেই টেস্টে পঞ্চম শতকের দেখা পান তিনি। লিটনের সেঞ্চুরির পর সাজঘরে ফিরেন মিরাজ। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ রান করেন মিরাজ। লিটনের সাথে ১২৩ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। এই ইনিংসে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ উইকেটে শতরানের জুটি গড়েছে বাংলাদেশ। দেশের টেস্ট ইতিহাসে এটিই প্রথম ঘটনা। তবে টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার এমনটা ঘটল।
মিরাজ ফেরার পরপরই আউট হন লিটন। হামফ্রিজের শিকারের আগে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ১৯২ বলে ১২৮ রান করেন তিনি। দলীয় ৪৩৩ রানের মধ্যে মিরাজ ও লিটন ফেরার পর লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের ছোট–ছোট ইনিংসের পর ৪৭৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। লোয়ার অর্ডারে তাইজুল ইসলাম ৪, হাসান মুরাদ ১১, খালেদ আহমেদ ৮ ও এবাদত হোসেন অপরাজিত ১৮ রান করেন। আয়ারল্যান্ড স্পিনার ম্যাকব্রিন ১০৯ রানে ৬ উইকেট নেন। টেস্টে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইনিংসে ৫ বা ততোধিক উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন তিনি।
নিজেদের ইনিংস শুরু করে উদ্বোধনী জুটিতে ৪১ রান যোগ করেন আয়ারল্যান্ডের দুই ওপেনার বলবির্নি ও পল স্টার্লিং। ২৬ বলে ২৭ রান করা স্টার্লিংকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার খালেদ আহমেদ। এরপর বলবির্নিকে শান্তর ক্যাচে পরিণত করেন স্পিনার হাসান মুরাদ। ২১ রান করেন আইরিশ অধিনায়ক। খালেদ–মুরাদের পর উইকেট শিকারের তালিকায় নাম তুলেন মিরাজ ও তাইজুল।
দলীয় রান ১শ স্পর্শ করার আগেই পঞ্চম উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। চ্যাড কারমাইকেলকে ১৭ রানে মিরাজ ও হ্যারি টেক্টরকে ১৪ রানে শিকার করেন তাইজুল। রানের খাতা খুলতে না পারা কার্টিস ক্যাম্ফারকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান মুরাদ। দিন শেষে লরকান টাকার ১১ ও স্টিফেন ডোহানি ২ রানে অপরাজিত আছেন। মুরাদ ২টি, খালেদ–তাইজুল ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন। আজ ম্যাচের তৃতীয় দিন।









