ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে সাম্প্রতিক রদবদল কোনো জায়গা থেকে করা হচ্ছে, সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনের কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে এলে সব ডিসি–এসপিকে একযোগে বদলির দাবি জানিয়েছে দলটি। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে লটারির মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশে বদলি করার পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।
নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়ে তারা নিজেদের পর্যবেক্ষণ এবং দাবির বিষয়গুলো ইসির সামনে তুলে ধরেন। সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে জামায়াতের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ এবং আইনজীবী শিশির মনির। খবর বিডিনিউজের।
গত কিছু দিনে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদলের প্রসঙ্গ ধরে গোলাম পরওয়ার বলেন, রদবদলের বিষয়টা একমাসে হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, ডিসি সেখানে রদবদল হয়েছে। মনে হয়েছে যেন কোনো ডিজাইন করে একটা উদ্দেশ্যে কোনো জায়গা থেকে এটা হচ্ছে। তফসিলের পর লটারির মাধ্যমে বদলির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনে নিরপেক্ষতায় আস্থা রাখার উপায় হল লটারির মাধ্যমে ট্রান্সফার হওয়া। যার যেখানে তকদিরে আছে। প্রধান উপদেষ্টাকেও বলেছি, এরকম করলে প্রশ্ন থাকবে না। উনার বক্তব্যে বোঝা গেল– কোনোভাবে কোনো জায়গা থেকে শুরু করেছে। কেউ জানছেন কি, জানছেন না, কিছুটা অস্পষ্ট কথা উনার থেকে বোঝা যায়।
তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনকেই আস্থার জায়গা হতে হবে বলে মন্তব্য করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, আগেও দুয়েকটা নির্বাচনে হয়েছে; তফসিল ঘোষণার পর একদিনে, এক রাতে সব ডিসি–এসপি রদবদল ঘটেছে। জাতি আস্থা রেখেছে, কমপ্লেইন ছিল না। নির্বাচন কমিশন এরকম একটা সিদ্ধান্ত না নিলে… এখন যেটা হচ্ছে পরিকল্পিত, ইনটেনশনাল।
আচরণবিধি ও প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ে গণভোটের প্রসঙ্গ উঠে না আসার বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে গণভোটের আয়োজন এবং প্রচারের দায়িত্বও ইসির। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটের ব্যালট নিয়ে তাদের পরিকল্পনাও জানাতে হবে। ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, একজন সেনা সদস্য নয়, বরং চার–পাঁচজন সদস্য নিয়োজিত করা গেলে ভালো হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সবার প্রত্যাশা, এবার সেটার পুনরাবৃত্তি হবে না। সরকার, ইসি, দল সবার একই প্রতিশ্রুতি, এটা জাতি আশা করছে। ইসির আন্তরিতা, প্রস্তুতি, লক্ষ্য করছি আমরা। এজন্য ইসির প্রতি আস্থাশীল হতে চাই, আশান্বিত হতে চাই।
তিনি বলেন, যে পরিস্থিতিতে নির্বাচন হচ্ছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পরিস্থিতিটাই সামগ্রিক অর্থে একটা চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রকাঠামো পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। দুর্বল কাঠামোতে নির্বাচন করতে হচ্ছে। ইসি সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন। প্রকৃত অর্থে বিগত দিনে স্বাধীন ছিল না। কমিশনের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার হয়েছে। ইসিকে কাজে লাগিয়ে জাতিকে বোকা বানানো হয়েছে। যার পরিণতিতে তিন কমিশনকে ভুগতে হচ্ছে, এটার পুনরাবুত্তি যেন না হয়। বর্তমান ইসির প্রতি আস্থা থাকার কথা বললেও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানান হামিদুর রহমান আযাদ।
তিনি বলেন, ইসি স্বাধীন হতে হলে অবশ্যই সাহসী হতে হবে। আশাবাদী, আপনারা সাহসী হবেন। সাহস দেখালে হবে না শুধু; স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আজকের সংলাপ খুবই গরুত্বপূর্ণ, এটা যেন ট্র্যাডিশনাল ধারাবাহিকতা না হয়, ব্যতিক্রম চাই।
জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, শুধু পলিসি লেভেলে স্বচ্ছতা থাকলে হবে না। পলিসি লেভেলে পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে, ন্যায্যতা নিয়ে ডাউট এখনও নেই। এখনও আমরা ইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মত বক্তব্য রাখিনি। কনফিডেন্স দেখিয়েছি। কিন্তু এক্সিকিউটিভ লেভেলে প্রশ্ন আছে। এঙিটিউভ লেভেলে সমন্বয় না হলে চমৎকার উৎসব হবে না। সরিষার মধ্যে ভূত আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।












