নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সেনা ও পুলিশের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থনে দ্রুত সংকট উত্তরণ ও জাতিকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হয়েছে

| বৃহস্পতিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়ে বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে আয়োজন করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন নির্বাচনের সময়। আমরা প্রস্তুত, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এটি একটি বড় প্রয়াস। অভ্যুত্থান থেকে নির্বাচনের পথে যাত্রা। এটি হবে শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর, আনন্দ ও মিলনের সময়। মানুষ তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে পারবে। খবর বাসসের।

অধ্যাপক ইউনূস গতকাল বুধবার মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি কমপ্লেক্সে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) কোর্স ২০২৫এর সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২৫এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং কোর্স থেকে অর্জিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সংকল্প জাতির অগ্রগতিতে কাজে লাগানোর আহ্বান জনান। তিনি বলেন, আপনারা এই কোর্স থেকে যে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সংকল্প অর্জন করেছেন তা জাতির অগ্রগতিতে কাজে লাগান। তিনি আরও বলেন, ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২৫এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

ডিএসসিএসসিকে একটি শীর্ষস্থানীয় সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে এসে আমি গর্বিত। এটি শুধু দেশের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান। গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যেহেতু বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তাই আমি নিশ্চিত আপনারা দেশের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। যে প্রস্তুতি ও কোর্স সম্পন্ন করেছেন, তা যেকোনো দেশে কাজে লাগাতে পারবেন। বাংলাদেশে থাকায় আপনারা ভাগ্যবান। কারণ দেশটি এক বিশাল পরিবর্তন ও রূপান্তরের সময় অতিক্রম করছে। আমরা বারবার বলেছি, আমরা নতুন বাংলাদেশের দিকে এগুচ্ছি।

গত বছরের ছাত্রজনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অতীত শাসন ব্যবস্থার অবসান হয়েছে। দেশের মানুষের মনে নতুন আশা ও আকাঙ্ক্ষার উদ্রেক হয়েছে। এই আশা শুধু বাংলাদেশে নয়, এটি বিশ্বব্যাপী একটি আকাঙ্ক্ষা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, কোর্সে অংশ নেওয়া বিদেশি ও বাংলাদেশি কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের সময় ঐতিহাসিক মুহূর্ত দেখেছেন, যা বাংলাদেশে বিরল অভিজ্ঞতা।

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। জনগণের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। বাংলাদেশ একটি ভাগ্যবান দেশ। সব বাহিনী তাদের নেতৃত্বের অধীনে জনগণের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ডিএসসিএসসি কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিদেশি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, দেশের একতা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থনের কারণে দ্রুত সংকট উত্তরণ এবং জাতিকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই একতার কারণে আমরা দেশের সকল আশা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পেরেছি। কারণ সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।

সংস্কারমূলক কর্মসূচির প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি আমরা অতীতে ফিরে যেতাম, সকল ত্যাগ বৃথা যেত। আমাদের স্বপ্নের দেশ গড়ে তুলতে হবে। এই ছিল সংস্কারের সংকল্প। সংস্কার একটি বিষয়, কিন্তু তা ঠিকমতো সম্পন্ন করতে হবে, যাতে আমরা আর কোনো ভুল না করিএটিও জানা জরুরি।

গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানেযর সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা আমাদের বিরুদ্ধে এ ভয়াবহ অপরাধ করেছেন, তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ডিএসসিএসসি কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিদেশি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের শক্তিশালী বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের উজ্জ্বল প্রতিফলন। আশা করি, ভবিষ্যতেও স্টাফ কলেজ ও বাংলাদেশের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।

আইএসপিআরের তথ্য মতে, ডিএসসিএসসি কোর্স২০২৫ এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭০ জন, নৌবাহিনীর ৪৫ জন এবং বিমান বাহিনীর ৩৬ জন কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তা এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্ডান, কেনিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সিয়েরা লিওন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক ও উগান্ডা থেকে আগত ৫৮ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। সব মিলিয়ে এ বছর মোট ৩১১ জন প্রশিক্ষণার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এতে বাংলাদেশ পুলিশের একজন নারী কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন মহিলা কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন, যা নারীর অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচ্চতর দায়িত্ব ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রস্তুত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫,৩২৯ জন কর্মকর্তা, ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং বন্ধুপ্রতিম ৪৫ দেশের ১,৪৬৫ জন বিদেশি সামরিক কর্মকর্তা মিলে মোট ৬,৮১৪ জন অফিসার এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরে এক দিনেই ৬ হাজার ৩০১টি গেটপাস ইস্যু
পরবর্তী নিবন্ধলালদিয়া ও পানগাঁওয়ে বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১০ বছর করমুক্ত সুবিধা : এনবিআর চেয়ারম্যান