এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ফিরতি লেগে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ–ভারত মুখোমুখি হচ্ছে। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে রাত ৮টায় শুরু হবে দুই দলের ময়দানি লড়াই। বাছাই পেরুনোর আশা শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশ–ভারত দুই দলেরই। তাতে করে অবশ্য ম্যাচের উত্তাপ কমছে না একটুও। দুই দলই প্রথম জয়ের খোঁজে মাঠে নামবে। তৃতীয় স্থানে থেকে ‘সি’ গ্রুপের পথচলা শেষের তীব্র আকাঙ্ক্ষাও আছে তাদের। সব মিলিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশ–ভারতের। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসে গতকাল বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা জানান,আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমরা শক্তিশালী। আর দৃঢ় কণ্ঠে কোচের সুরে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও বললেন, জয়ের বড় সুযোগ আছে তার দলের সামনে। কাবরেরা ও জামালের মতো অবশ্য ভারত কোচ খালিদ জামিল ও দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা গোলরক্ষক সাহিল পুনিয়ার কণ্ঠে ছিল কম ঝাঁঝ। তার এটাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ’ বলে স্বীকার করে জানালেন ‘চাপ আছে’। পরিসংখ্যান অবশ্য পক্ষে নেই বাংলাদেশের। ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সবশেষ ভারতের বিপক্ষে জিতেছিল দল। গত মার্চে শিলংয়ে বাছাইয়ের প্রথম লেগে মুখোমুখি হয়েছিল দুই প্রতিবেশি দেশ; গোলশূন্য ড্র হয়েছিল ম্যাচটি। নিকট অতীতে ভারতের বিপক্ষে জয়ের সেরা সম্ভাবনা বাংলাদেশ জাগিয়েছিল ২০১৯ সালে। কলকাতার সল্ট লেকে সাদ উদ্দিনের গোলে জয়ের পথে ছিল বাংলাদেশ, কিন্তু শেষ দিকের গোলে দলের মুঠো গলে বেরিয়ে যায় জয়। সামপ্রতিক সময়ে এমন অভিজ্ঞতা এতো বেশি যে, তা রীতিমতো শঙ্কায় রূপ নিয়েছে। হংকংয়ের বিপক্ষে ড্রয়ের পথে থাকা ম্যাচে শেষ সময়ের গোলে ৪–৩ ব্যবধানের হার, সবশেষ নেপালের বিপক্ষে জয়ের ঘ্রাণ পেতে পেতে জামাল–মিতুলরা মাঠ ছাড়ে ২–২ ড্র নিয়ে। ভারত ম্যাচে শেষ মুহূর্তে সব আয়োজন ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যেন শঙ্কিত কাবরেরাও। এই ধারার ইতি টানতে উন্মুখ তিনি। ‘যদি আমরা ৩ পয়েন্ট পেতে চাই, অবশ্যই কাল এমন কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না। এসব পরিস্থিতি আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে, সেগুলো থেকে শিখতে হবে, কাজ করতে হবে। এ কারণেই তো প্রস্তুতি ম্যাচগুলো খেলা হয়। এখন প্রস্তুতি ম্যাচে যা হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিশ্চিত করতে হবে কাল যেন এমন কিছু না ঘটে।

দলকে শক্তিশালী থাকতে হবে। খেলতে নামতে হবে প্রচণ্ড উদ্দীপনা নিয়ে এবং খুব পরিষ্কার একটি পরিকল্পনা নিয়ে। আমরা পরিকল্পনা জানি, আমরা তাদের ঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেছি এবং জানি আমরা তাদের আঘাত করতে পারব। সবকিছু নির্ভর করছে আমরা কেমনভাবে ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রণ করি, কীভাবে মুহূর্তগুলো নিজেদের করে নিই। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত বার্তা হলো– আমাদের ৩ পয়েন্ট দরকার। কারণ আমরা এই পয়েন্ট পাওয়ার যোগ্য এবং আমরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। ব্যক্তিগতভাবে আমি এটাই মনে করি।’ গত ২২ বছরের আধিপত্য একপাশে রেখে হামজা চৌধুরী, সামিত সোম, জায়ান আহমেদের মতো প্রবাসীদের নিয়ে গড়া বর্তমান বাংলাদেশকে সমীহ করার কথা বলেছেন খালিদ জামিল। তবে ভারত কোচ এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ঢাকা থেকে হাসিমুখে ফিরতে হলে নিংড়ে দিতে হবে সেরাটা। ‘এটি কোনো প্রীতি ম্যাচ নয়। এটি বাছাই ম্যাচ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচ মানেই গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, চাপ আছে। সবাই জানে, দায়িত্ব নিতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’ গত মার্চে শিলংয়ের ম্যাচে দলের বাইরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন দুজন। ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজার লাল–সবুজের জার্সিতে ছিল অভিষেক ম্যাচ। ওই ম্যাচে অবসর ভেঙে ফেরা ভারতীয় গ্রেট সুনিল ছেত্রীকে সেদিন দ্যুতিময় পারফরম্যান্সে অনেকটা আড়ালে রেখেছিলেন তিনি। ফিরতি লেগে ছেত্রী নেই ভারতের তাবুতে। হামজা ঠিকই আছেন বাংলাদেশের পরিকল্পনার ভরকেন্দ্রে। এরই মধ্যে খেলা ছয় ম্যাচে চার গোল করেছেন হামজা। দলের সাথে মাঝের সময়ে তার বোঝাপড়া হয়েছে আগের চেয়ে বেশি। নেপাল ম্যাচে দৃষ্টিনন্দন বাইসাইকেল কিক ও ‘পানেনকা’ শটে পেনাল্টি থেকে গোল করে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে নিয়েছেন হামজা। এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের সাথে বনিবনা হওয়ার কথা অধিনায়ক জামালও বলেছেন, তার দুই গোলে ‘অ্যাসিস্ট’ করার প্রসঙ্গ টেনে। খালিদ অবশ্য হামজা ও ছেত্রীর কাউকে নিয়ে খুব একটা কথা বলেননি। আমরা শুধু একজন খেলোয়াড় নিয়ে ভাবি না। বাংলাদেশের সব খেলোয়াড়ই ভালো। তাই আমরা পুরো দলকে নিয়েই ভাবছি। ছেত্রী আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছে তাই আমাদের ভাবনায় নেই। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৪৭ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারত কোচের তেড়েফুঁড়ে কথা না বলা একটা কৌশলও হতে পারে।
কেননা, বাংলাদেশ কোচ কাবরেরার যে মনে হচ্ছে, মাঠের লড়াইয়ে আগ্রাসী মনোভাব নিয়েই নামবে লালিয়ানজুয়ালা চাংতে–ফের্নান্দেসরা। দুই দেশের ম্যাচে তিনি দেখছেন ডার্বির উত্তাপ। ‘সম্ভবত ভারত একটু বেশি আগ্রাসী হবে এবং তারা জয়ের জন্যই খেলতে নামবে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করেছি। নেপালের বিপক্ষে কোন জিনিসগুলো আমরা করতে পেরেছি এবং কোন জিনিসগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে পারিনি, সব বিশ্লেষণ করেছি।
আশা করি কাল সব ঠিকভাবে কাজে লাগবে। আমি মনে করি এই ম্যাচে অনেক আবেগ জড়িত, ডার্বির আবহটা সবার জন্যই বিশেষ কিছু । দল আবেগ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটাই আসল। এই ম্যাচের গুরুত্ব আমাদের প্রেরণা দিচ্ছে এবং জয়ের জন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ করাটাও জরুরি। কারণ আমাদের সামর্থ্য আছে, আমরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। তাই ভারতের বিপক্ষে অবশেষে জয়ের সুযোগটা নিতে হবে। সত্যি বলতে আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী যে কাল তিন পয়েন্ট নিতে পারব।’












