আয়তনে দেশের বৃহৎ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মোহনীয় এক ক্যাম্পাসের নাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারীর ফতেপুরের জোবরা গ্রামে পাহাড়ঘেরা ২৩শ একর সমতল ও উঁচু–নিচু পাহাড়ি ভূমিতে ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৮০ সালে চালু হওয়া শাটল ট্রেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান পরিবহন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আজ ৫৯ বছর শেষ করে ৬০ বছরের হীরক জয়ন্তীতে পা ফেলেছে।
১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর মাত্র চারটি (বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি) বিভাগে ২০৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। যাত্রালগ্নে শিক্ষক ছিলেন হাতেগোনা ৮ জন। যাত্রালগ্নের চারটি বিভাগের স্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ৯টি অনুষদের অধীনে ৫৪টি বিভাগ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৬টি ইনস্টিটিউট, ৫টি গবেষণা কেন্দ্র, অধিভুক্ত অনুষদ ১টি, অধিভুক্ত ইনস্টিটিউট ১টি এবং অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে ২৫টি। মোট শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২৮–৩০ হাজার। শিক্ষক রয়েছেন প্রায় এক হাজার জন। কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি।
শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ১৪টি আবাসিক হল। এর মধ্যে ৯টি ছাত্রদের এবং ৫টি ছাত্রীদের। রয়েছে একটি হোস্টেল। অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহরের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার শিক্ষার্থী এসব হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন বাসা ও কটেজে থাকছে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী। বাকি সিংহভাগ শিক্ষার্থী শহরের বিভিন্ন বাসা ও মেসে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। শহরে থাকা এ সকল শিক্ষার্থীর যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দিনে একজোড়া শাটল ট্রেন দিনে ৯ বার আসা যাওয়া করে। এবং বন্ধের দিনে ৩ বার আসা যাওয়া করে ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে আসা–যাওয়ার পথে পুরোটা সময়জুড়ে গানে–গানে মুখর থাকে শাটলের সবকয়টি বগি। তৈরি হয় গানের মেলা। এটাকে বলা হয় চলন্ত ক্যাম্পাস। দিনের পর দিন বগি চাপড়িয়ে গানে–গানে শাটল মাতিয়ে রাখেন শিক্ষার্থীরাই। রক–র্যাপের পাশাপাশি জারি–সারি, ভাটিয়ালি, প্যারোডি, পাহাড়ি ও বাংলা সিনেমার গানসহ এমন কোন গান হয়তো বাদ নেই, যা শাটলে গাওয়া হয় না। বিভিন্ন রকম ছড়া, কবিতা, গান আর আড্ডায় মুখোরিত থাকে শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীদের আবেগের মিশেলে এটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গী হিসেবে পরিণত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রালগ্নে প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান (এ আর) মল্লিক। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। ৬০ বছরের চাকসু নির্বাচন হয়েছে মোট ৭ বার। ১৯৯০ সালে চাকসু নির্বাচনের পর প্রায় ৩৫ বছর আবার চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর এই চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে। ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি ও জিএস সাঈদ বিন হাবিব শিবির প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছে। এবং এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ছাত্রদলের মনোনীত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছে। ৬০ বছরে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র পাঁচবার।
এদিকে হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে আনন্দ শোভাযাত্রা, কেক কাটা, আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপাচার্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এস.এম. ফজলুল হক। পুরো আয়োজনের সভাপতিত্ব করবেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ৬০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল–আমীন।
সকাল ১০টায় চবি স্মরণ চত্বরে উদ্বোধন ও আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি স্মরণ চত্বর–কাটা পাহাড়–কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার–জারুল তলা–কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ (পুরাতন) হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হবে। বেলা সাড়ে ১০টায় প্রশাসনিক ভবন সম্মুখে কেক কাটা অনুষ্ঠিত হবে।
বেলা ১১টা ১৫ মিনিট থেকে সমাজবিজ্ঞান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ। দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ পর্ব হিসেবে বিকাল ৩টা থেকে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও প্রতিটি আবাসিক হলে করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত ভোজের আয়োজন।












