চট্টগ্রামের মেয়েকে ছেলের পুত্রবধূ করে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সুদূর চীন থেকে এসেছিলেন লিও লি। কিন্তু প্রতারকের খপ্পরে পড়ে তিনি হলেন প্রতারিত। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তার নাম নাজমা আক্তার চৌধুরী। নগরীর দেওয়ান বাজার এলাকার বাসিন্দা হলেও তিনি বসবাস করেন খুলশী এলাকায়। গতকাল চট্টগ্রামের ৪র্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন। এর আগে আদালতের সমনের প্রেক্ষিতে নাজমা চৌধুরী আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিচারক তা নাকচ করে দেন। প্রতারণার শিকার চীনা নাগরিক লিও লি’র আইনজীবী মেজবাহ উল আলম দৈনিক আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
লিও লি একজন নারী। তিনি নানা দেশ ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। গত বছরের ২৫ এপ্রিল এসেছিলেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম ভ্রমণের পেছনে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি ছেলের জন্য চট্টগ্রামের কোনো মেয়েকে পুত্রবধূ করে চীনে নিয়ে যাবেন, এমন উদ্দেশ্যও ছিল তার। এ জন্য তিনি টাকা–পয়সাও খরচ করলেন। কিন্তু প্রতারণার শিকার হলেন। পেলেন নানা রকম হুমকিও। এ ঘটনায় লিও লি চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–৫ এ গত ৩ মার্চ একটি নালিশি মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালত তখন তার বক্তব্য শুনে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে পিবিআই ঘটনায় সম্পৃক্ত তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। দাখিলকৃত উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চীন থেকে সখের বশে ভ্রমণ করতে এসে একজন বাংলাদেশি মেয়েকে ছেলের বধূ করে চীনে নিয়ে যেতে চাওয়া লিও লি’র প্রতারিত হওয়ার গল্প। তিন আসামি হলেন– ডেভিড ওয়াং, তার স্ত্রী নাজমা আক্তার চৌধুরী ও বোন লোইস ওয়াং। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০ লাখ টাকায় পাত্রী খোঁজা, বিয়ে সম্পন্ন করা, পুত্রবধূকে চীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভিসা, পাসপোর্টসহ পেপার ওয়ার্ক তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও পাত্রী খুঁজে বের করার কাজটি ছাড়া বাকি কাজ সম্পন্ন করেননি ডেভিড ও অপর দুই আসামি। বরং নকল কাগজপত্র তৈরি করে লিও লি’র সাথে প্রতারণা করেছেন। যেহেতু পুরো কাজ সম্পন্ন করেননি, সেহেতু টাকা ফেরত চাইলে তা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা হয়। বাড়াবাড়ি করলে খুন করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডেভিড ও তার বোন লোইস চীনা বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি নাগরিক। ১৯৪৯ সালে চাইনিজ সিভিল ওয়ারে ডেভিড, লোইস’র বাবা ওয়াং জং ছিও’র ন্যাশনালিস্ট পার্টি হেরে যায়। জয়লাভ করে কমিউনিস্ট পার্টি। এরপর ওয়াং জং ছিও’কে বহিষ্কার করা হলে তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন। বাংলাদেশেই ডেভিড ও লোইস জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের কোনো মেয়েকে ছেলের পুত্রবধূ করে নিয়ে যেতে সূদুর চীন থেকে এসে লিও লি’র প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে গত ১০ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।












