১৩ লাখ রোহিঙ্গার জন্য সরকারের ‘নবান্ন উপহার’

কক্সবাজারের ৩৩ ক্যাম্পে একদিনের খাবার হিসেবে চার লাখ কেজি চাল বরাদ্দ

হাসান আকবর | সোমবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের কৃষকদের নবান্ন উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে থাকা ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গার একদিনের খাবার হিসেবে চার লাখ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষকদের পক্ষ থেকে নবান্ন উপলক্ষে সরকার মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় এই চাল প্রদান করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল এই তথ্য জানিয়েছেন।

সচিব জানান, নবান্ন বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে শুধু নতুন ধান ওঠার উৎসবই নয়, বরং কৃষকের হাসিআনন্দের প্রতীক। দেশের কৃষক যখন ঘরে ঘরে নতুন ধান তুলছেন, তখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্মরণ করাও সরকারের মানবিক দায়িত্ব। তার ভাষায়, নবান্নের এই আনন্দমুখর সময়ে রোহিঙ্গাদের কথা ভুলে থাকা অমানবিক হতো। তাই এ বছর নবান্ন উপলক্ষে তাদের একদিনের খাবার হিসেবে ৪ লাখ কেজি চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সচিব জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুকআজম বীর প্রতীক এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন এবং বিষয়টি সরকার বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে অনুমোদন দেয়। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ মানবিক বিবেচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত, যাতে নবান্ন উৎসবের উচ্ছ্বাস কিছুটা হলেও কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছে যায়।

সূত্র জানায়, আট বছর ধরে উখিয়াটেকনাফের ৩৩টি ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে অবস্থান করছে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। নিজেদের দেশ মিয়ানমারে ভয়াবহ নির্যাতন, সহিংসতা ও প্রাণনাশের আশঙ্কায় পালিয়ে এসে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে ১০ ফুট বাই ১৫ ফুটের সংকীর্ণ কাঁচাঘরে। ক্যাম্পগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে, যা ক্যাম্পভিত্তিক জনসংখ্যার চাপ আরো বাড়াচ্ছে। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় খাদ্য, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি, জীবিকা ও নিরাপত্তাসহ সব ক্ষেত্রেই চাপ বাড়ছে সরকারের ওপর।

এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা বছর বছর কমছে। বর্তমানে ছয় মাসের বেশি বয়সী প্রতিজন রোহিঙ্গা মাত্র ১২ ডলার বা প্রায় ১৫০০ টাকা সমমূল্যের সহায়তা পায়। এই সাহায্য নগদে দেওয়া হয় না; স্মার্ট কার্ডে দেওয়া হয়, যা দিয়ে তারা ক্যাম্পের নির্দিষ্ট দোকান থেকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য কিনতে পারে। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংকোচনের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি সংকট এবং দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের ৪ লাখ কেজি চাল বরাদ্দকে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চাই, নবান্নের আনন্দ শুধু আমাদের গ্রামে নয়, কয়েক লাখ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মুখে একদিনের জন্য হলেও হাসি ফোটাক। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি আজাদীকে বলেন, আমরা মানবিক কার্যক্রমের আওতায় এই চাল দিচ্ছি। নবান্ন উৎসবের আমেজ যাতে ক্যাম্পগুলোতেও লাগে সেজন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই নম্বর গেটে পরপর দুটি বিস্ফোরণ
পরবর্তী নিবন্ধচবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার