ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক বিভাজকে কেটে ফেলা হল ৫০টি বকুল গাছ

থানায় অভিযোগ সওজের

| রবিবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার বেলতলী এলাকায় থাকা অন্তত ৫০টি বকুল ফুলের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ থানায় অভিযোগ দিয়েছে। গতকাল শনিবার বিকালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, মহাসড়কের বেলতলী এলাকায় প্রায় ৫০টি বকুল গাছ এক ব্যক্তি কেটে নিয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় সদর দক্ষিণ থানার ওসি মো. সেলিম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। মামলাটি প্রক্রিয়াধীন। খবর বিডিনিউজের।

সরজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ এলাকার বেলতলীতে ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভাজকের গাছ কাটা হয়েছে। যার বেশিরভাগই বকুল ফুলের গাছ। এ ছাড়া সেখানে বেলী ফুল, তালসহ অন্যান্য গাছ কাটা হয়েছে। সেই জায়গায় আবার কলা, আম ও কাঁঠাল গাছ লাগানো হয়েছে।

গত বছরের মাঝামাঝি একই মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের হায়দারপুল থেকে ফাল্গুনকরা মাজার পর্যন্ত ৫০টি বেলী ফুল গাছ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। বেলতলী এলাকায় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আজমিরি হোসেন নামে এক ব্যক্তি এই গাছগুলো কেটেছেন। তিনি মহাসড়কের পাশে একটি টিনের ঘরে থাকেন। তবে দুপুরে ওই ঘরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

বকুল ফুলের গাছ কেটে ফেলার সংবাদ পেয়ে বেলতলী এলাকায় আসেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যসহকারী রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বেলতলীতে নির্মাণাধীন মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে এসে দেখেছি, মোট ১৭টি গাছ কাটা হয়েছে। শুনেছি, আশপাশে আরও বেশ কয়েকটি গাছ কাটা হয়েছে। আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। যেসব বকুল গাছ কাটা হয়েছে, এসব গাছের বয়স অন্তত ১০ বছর। গাছগুলো কাটা অন্যায় হয়েছে।

বেলতলীর বাসিন্দা আবদুল আউয়াল বলেন, আজমিরি হোসেন নামে এক ব্যক্তি এই গাছ কেটেছেন। সে বলে, মহাসড়কের মাঝখানের মালিকানা নাকি তার! জায়গাটা জঞ্জালের মত লাগে তাই নাকি বকুল গাছগুলো কেটে ফেলেছেন। আগে এলাকাটা কী সুন্দর লাগতো! এখন একেবারে বিরাণ। যে ব্যক্তিই গাছ কাটুক তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম। তিনি বলেন, না হয় আরও অনেকে গাছ কাটার সাহস পাবে।

বেলতলী এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পে কথা হয় ট্রাকের চালক হৃদয় হাসানের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, আইল্যান্ডের গাছের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি ভোগ করেন চালকরা। রাতের বেলা গাড়ি চালানোর সময় সড়কের মাঝখানের এসব গাছের কারণে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের লাইটের আলো চালকের চোখে পড়ে না। দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমায়। এই চালক বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচিত নিয়ম মেনে আরও গাছ লাগানো। আর যারা গাছ কাটে তাদের শাস্তি দেওয়া।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, মহাসড়কটি ২০১৬ সালে চার লেনে রূপান্তর করার পর সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি এক লেনের গাড়ির হেডলাইটের আলো যাতে অন্য লেনের গাড়ির ওপর না পড়ে, সেজন্য বিভাজকের ওপর লাগানো হয়েছিল বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। মহাসড়কের বিভাজকটি কোথাও ফুল গাছে, আবার কোথাও অন্যান্য বৃক্ষে সাজানো হয়েছে।

কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেইট পর্যন্ত প্রায় ১৯২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে মহাসড়কের প্রায় ১৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বকুল, কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ, রাধাচূঁড়া, হৈমন্তী, টগর, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, পলাশসহ নানান ফুলের গাছ। এ রকম ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি। এ ছাড়া সড়কের পাশে এবং বিভিন্ন স্থানে বিভাজকের ওপর লাগানো হয়েছে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, নিম, একাশিয়া, হরীতকীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৪০ হাজারের বেশি গাছ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রেমিকার ফাঁদে ফেলে ঢাকায় এনে বন্ধুকে খুন
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে দেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে