মোবাইলের ডিসপ্লে পরিবর্তনে বিল আসে ১৫০০ টাকা। ৩০০ টাকা পরিশোধ করলেও ১২শ টাকা বাকি রাখা হয়। সেই টাকা মোবাইল মেকানিক আকাশ ঘোষকে দিচ্ছিলেন না নগরীর এনায়েত বাজারের বাসিন্দা মো. সানি। এর মধ্যে অতিবাহিত হলো এক মাস। এক পর্যায়ে গত শুক্রবার চাপ প্রয়োগ করলে সানি টাকা পরিশোধ করবেন জানিয়ে আকাশ ঘোষকে এনায়েত বাজারের কসাইপাড়া এলাকায় ডেকে আনেন। আকাশ সেখানে পৌঁছালে সানি তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। এতে আকাশ ঘোষের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এক পর্যায়ে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আকাশকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় সানিকে সহযোগিতা করেন ইউছুফ ও শাকিল আলম ফয়সালসহ কয়েকজন যুবক। সানি ও ইউছুফ সহোদর।
হত্যাকাণ্ডের পর সানি আত্মগোপনে চলে যান। চন্দনাইশ উপজেলার রৌশনহাট এলাকায় মামাবাড়িতে লুকিয়ে থাকেন। ঘটনার পর থেকে পুলিশসহ আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সানি ও তার সহযোগীদের খুঁজতে থাকে। ঘটনার রাতেই চন্দনাইশের রৌশনহাট এলাকার মামাবাড়ি থেকে সানিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব–৭ এর একটি টিম। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন রেয়াজুদ্দিন বাজারের চৈতন্য গলি থেকে ঘটনায় জড়িত আরো দুজনকে একই রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন এনায়েত বাজারের মো. আলমের ছেলে মো. ইউছুফ ও নন্দনকানন এলাকার নুর আলমের ছেলে শাকিল আলম ফয়সাল।
ভিকটিম আকাশ ঘোষ এনায়েত বাজারের গোয়ালপাড়া এলাকার বুলু ঘোষের ছেলে। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত সানি আত্মগোপনে যাওয়ার আগে ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিটি নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজার উকিল বাড়ি জামে মসজিদ সংলগ্ন একটি নালায় ফেলে দেন। গ্রেপ্তার পরবর্তী তিনি ও তার সহযোগীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত ছুরিটি সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানে র্যাবকে সহায়তা করে পুলিশ।
গতকাল শনিবার র্যাব–৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের (বহদ্দারহাট) মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাওহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, পাওনা টাকা দেবে বলে ডেকে নিয়ে আকাশ ঘোষকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি রেয়াজুদ্দিন বাজার উকিল বাড়ি জামে মসজিদ সংলগ্ন একটি নালা থেকে উদ্ধারের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা তাওহিদুল ইসলাম বলেন, পেশায় মোবাইল মেকানিক আকাশের কাছ থেকে আনুমানিক এক মাস আগে ১৫শ টাকায় একটি মোবাইল মেরামত করিয়েছিলেন সানি। এর জন্য ৩০০ টাকা পরিশোধ করলেও বাকি টাকা পরিশোধ করেননি। এ টাকার জন্য আকাশ বিভিন্ন সময় সানিকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। ঘটনার দিন রাতে টাকা দেয়ার জন্য আকাশকে ডেকে নিয়েছিল সানি। এ সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে সহযোগীদের নিয়ে আকাশকে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে মাদক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, ঘটনায় আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সেসব নিয়ে র্যাব কাজ করছে বলে জানান।
গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে মোবাইল মেকানিক আকাশ ঘোষ খুন হন। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে সানিসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।












