চট্টগ্রামে আসছে বিএসসির নতুন জাহাজ বাংলার প্রগতি

প্রথম সমুদ্রযাত্রা

হাসান আকবর | রবিবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) নিজের টাকায় কেনা বহরের সবচেয়ে বড় নতুন জাহাজ ‘এমভি বাংলার প্রগতি’ প্রথম সমুদ্রযাত্রায় (মেইডেন ভয়েজ) চট্টগ্রামে আসছে। আগামী ২০ নভেম্বর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করবে। গত ২৩ অক্টোবর চীনের নানইয়াং শিপইয়ার্ডে প্রস্তুত করা জাহাজটি বিএসসি গ্রহণ করে। জাহাজটিকে দৈনিক ২০ হাজার ডলার ভাড়ায় হংকংয়ের এলটিই নামের কোম্পানি পরিচালনা করছে। তারাই জাহাজটিকে দেশের সিমেন্ট কারখানার জন্য আমদানিকৃত ৬১ হাজার ৫শ টন স্ল্যাগ বোঝাই করে চট্টগ্রামে পাঠাচ্ছে। ৪ নভেম্বর চীনের ডেনডং বন্দর থেকে জাহাজটি চট্টগ্রামের পথে যাত্রা করেছে। এটির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সি কম শিপিং লাইন্স লিমিটেড।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক জানিয়েছেন, এমভি বাংলার প্রগতি মেইডেন ভয়েজে চট্টগ্রাম আসছে। বিষয়টি কাকতালীয় হলেও মনে হচ্ছে এমভি বাংলার প্রগতি ঘরে ফিরছে। তিনি বলেন, হংকংয়ের একটি কোম্পানিকে দৈনিক ২০ হাজার ডলারে আমরা জাহাজটি ভাড়া দিয়েছি। জাহাজটি কোন বন্দরের পণ্য কীভাবে পরিবহন করবে সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু প্রথম ভয়েজটি চট্টগ্রামে হওয়ায় আমাদের খুবই ভালো লাগছে।

বিএসসির পাঁচ দশকের ইতিহাসে এমভি বাংলার প্রগতি কেনাটা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রথম বিএসসি নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কিনেছে। এটিই বিএসসির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ।

প্রায় ১৯৯ মিটার লম্বা জাহাজটি ৬৩ হাজার ৭৭৭ টন পণ্য পরিবহনের উপযোগী। জাহাজটি মেইডেন ভয়েজে ৬১ হাজার ৫শ টন পণ্য পরিবহন করছে। এটি কুতুবদিয়ায় নোঙর করে বেশ কিছু স্ল্যাগ লাইটারিং করছে। কিছুটা হালকা (ড্রাফট কমা) হলে জাহাজটি বন্দরের কাছাকাছি বহির্নোঙরে এসে বাকি পণ্য লাইটারিং করবে। প্রথম ভয়েজে ঘরে ফিরলেও এমভি বাংলার প্রগতি বন্দরের জেটিতে আসতে পারবে না। এত বড় জাহাজ জেটিতে আনার সুযোগ নেই বলে আজাদীকে জানিয়েছেন সি কম শিপিংয়ের পরিচালক জহুর আহমেদ।

উল্লেখ্য, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৩৬ কোটি টাকায় দুটি জাহাজ কেনে বিএসসি। নির্মাণাধীন বা নির্মাণ শেষের পথে রয়েছে এমন জাহাজ কেনার দরপত্রের কারণে মাত্র ৫ মাসের প্রক্রিয়ায় নতুন জাহাজটি বহরে যুক্ত করতে সক্ষম হয় বিএসসি। নতুন দুই জাহাজের আরেকটি এমভি বাংলার নবযাত্রাও আগামী কিছুদিনের মধ্যে বিএসসির বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করা বিএসসির বহরে একসময় ৪৪টি জাহাজ ছিল। কিন্তু নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় বিএসসি লোকসান দিতে দিতে একেবারে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালে এসে সংস্থার বহরে জাহাজের সংখ্যা দুটিতে নেমে আসে। পরে চীনের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকায় ২০১৮ সালে তিনটি এবং ২০১৯ সালে তিনটি জাহাজ কেনা হলে বিএসসির বহর উন্নীত হয় আটটি জাহাজে।

২০২২ সালের ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০২২ সালে বিএসসির বহর সাতটি জাহাজে নেমে আসে। গত বছর অক্টোবরে এক সপ্তাহের মধ্যে ৩৭ বছরের পুরনো এমটি বাংলার সৌরভ ও এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজ দুটি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে এ দুটি জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে ৫৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হলে বিএসসিতে জাহাজের বহর নেমে আসে পাঁচটিতে। নতুন জাহাজটি যুক্ত হওয়ায় বিএসসির বহরে বর্তমানে ছয়টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি তেল পরিবহন করা ট্যাংকার এবং তিনটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের বাল্ক জাহাজ। নতুন অপর জাহাজটি যুক্ত হলে সংস্থাটির বহরে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে সাতটিতে উন্নীত হবে। সংস্থাটির বহরে বর্তমানে পুরনো কোনো জাহাজ নেই।

নতুন কেনা জাহাজ দুটি থেকে বছরে ২০০ কোটি টাকা আয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাটা ধান পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা
পরবর্তী নিবন্ধনাফাখুম জলপ্রপাতে নেমে পর্যটক নিখোঁজ