নগরীর বায়েজিদের চালিতাতলীতে সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলা খুনে নাম আসা আরেক সন্ত্রাসী মোহাম্মদ রায়হানের বিরুদ্ধে এবার এক ব্যবসায়ীকে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। খুনের হুমকি পাওয়া ব্যক্তি হলেন একজন পাথর ব্যবসায়ী। তার নাম মো. একরাম। গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি জানিয়েছেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্যবসায়ী একরামকে রায়হান বলছেন, তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব।
উত্তর চট্টগ্রামের কয়েকটি থানা এবং নগরীর কয়েকটি থানা এলাকায় খুন, চাঁদাবাজি, এমনকি নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওসিকে মারধরের হুমকি দিয়ে আলোচনায় উঠে আসার পর গত ১৫ মার্চ ঢাকায় গ্রেপ্তার হন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। এরপর থেকে তার সাম্রাজ্য দেখভাল করছেন মোহাম্মদ রায়হান।
‘ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারার হুমকি’ দেওয়ার কথা জানিয়ে পাথর ব্যবসায়ী মো. একরাম বলেন, ঢাকার একটি শপিংমলে ঘুরছিলেন ছোট সাজ্জাদ। তখন তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করি। এ ঘটনায় সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না (তিনিও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন) এবং বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ হুমকি দিয়েছেন। ওই হুমকির ঘটনায় তিনি পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। এরপর মামলা তুলে নিতে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে হুমকির বিষয়ে থানায় মামলা কিংবা জিডি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। হুমকির বিষয়টি আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, ছোট সাজ্জাদের অবর্তমানে চট্টগ্রাম উত্তরের কয়েকটি থানা এলাকা ও নগরীর কয়েকটি থানা এলাকায় সন্ত্রাসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোহাম্মদ রায়হান। রায়হানের বিরুদ্ধে একাধিক খুনের অভিযোগ রয়েছে। নগরীর বায়েজিদের চালিতাতলী এলাকায় ৫ নভেম্বর আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নেন সরোয়ার বাবলা। সেখানে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর তিন দিন আগে সরোয়ার বাবলাকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে। নিহত সরোয়ারের বাবা জানান, রায়হান সরোয়ারকে ফোন দিয়ে বলেন, তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।
এর আগে ২৫ অক্টোবর রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদলকর্মী আলমগীর আলমকে। এই হত্যা মামলায় রায়হানকে আসামি করা হয়েছে। ২৫ জুলাই নগরীর কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানিকেও মোবাইলে হুমকি দেন রায়হান। তিনি দোকানিকে বলেন, আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব। …আকবর সিবিচে কীভাবে পড়েছিল তুই দেখছস? তুইও পড়ে থাকবি। চাঁদা না পেয়ে গত ১ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার এক ব্যবসায়ীকেও গুলি করার অভিযোগ ওঠে রায়হানের বিরুদ্ধে। মো. ইউনুস নামে ওই ব্যবসায়ী নদী থেকে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্রের ব্যবসা করেন।
আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, একটি হত্যা মামলায় কারাগারে গিয়ে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি কারাগারে গেলে রায়হান তার সাম্রাজ্য দেখভাল করছেন। সব মিলে ৭টি খুনসহ নগরীর জেলা ও মহানগরের থানায় রায়হানের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে র্যাব–৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তাওহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমাদের টিম কাজ করছে। আমরা আশা করছি, শীঘ্রই রায়হানকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।







