চট্টগ্রামের দুই মহীয়সী

মলিনা মজুমদার | শনিবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব সময় প্রবাহের প্রজন্ম সৃষ্টিকর্তা নারী। ‘নারী’ এই একটি শব্দ বিবেক আর মনের দরজা খুলে নিজের মুখে নিজেই একটিবার উচ্চারণ করে শুনুন, বলুন ‘নারী’। আপনি যখন যেখানে যে অবস্থায় শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে আত্মিক জ্ঞান ভেতরে নিয়ে শুনবেন, আপনার দৃষ্টির সামনে এসে দাঁড়াবে এক দৃঢ়তা, আদর্শ কাল মহাকালের সংগ্রামী চেতনার অবয়ব রেখাসত্তা। আর যখন উচ্চারণ করবেন ‘মেয়ে’; আপনার প্রাণমন আবিষ্ট করবে এক অদ্ভুত মমতায়। এই পৃথিবীর অস্তিত্ব যে শব্দের কাছে সমর্পিত সেই নারীদের এগিয়ে যাওয়ার, নিজেদের আলোকিত করে তোলার দিশা এবং নারী অবমূল্যায়ন থেকে উত্তরণ নিয়ে এই সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ যুগে বর্তমান চট্টগ্রামে বেগম রোকেয়ার উত্তরসূরী হয়ে সংগ্রামী বাণীতে নারী সত্তা জাগরণে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন মহীয়সী দুই নারী ড. আনোয়ারা আলম এবং প্রফেসর রীতা দত্ত। চট্টগ্রাম একাডেমি যাকে বলা যায়, সাহিত্যের পবিত্র তীর্থস্থান, জ্ঞানের আতুর ঘর, মহান গুণীজনরা যেখানে নতুন প্রজন্মের ভেতরে সাহিত্যের তত্ত্ব আলোচনায় এক একটি জ্ঞান প্রদীপের জন্ম দেন। বাংলাদেশের আনাচকানাচ থেকে সাহিত্যরত্নদের একসাথে পাশাপাশি বসিয়ে জ্ঞানের বাণী হৃদয়ে লিপিবদ্ধ করার সুযোগদানে নিরলস প্রচেষ্টায় ক্লান্তিহীন শ্রম দিয়ে যান সবার প্রিয় একাডেমির সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা ড.আনোয়ারা আলম এবং অধ্যাপক রীতা দত্তকে চট্টগ্রাম একাডেমির সাহিত্য অডিটরিয়ামে পাশাপাশি বসিয়ে সাহিত্য চর্চা এবং চট্টগ্রামে নারী সাহিত্য উন্নয়নের পথ প্রসারিত করে চলেছেন।

এই আধুনিক ডিজিটাল সময়েও বিবেকহীন পুরুষতন্ত্রের তর্জনী কতটা সোচ্চার আছে নারী সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ দমনে এবং সেই তর্জনী উপেক্ষা করে নারী সাহিত্য সমাজ কিভাবে নিজেদের প্রাবন্ধিক, গল্পকার, কবি, ছড়াকার হিসেবে সমৃদ্ধ করবে তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন ড.আনোয়ারা আলম এবং রীতাদত্ত। ড.আনোয়ারা আলম অমিয় সারল্যে যখন তাঁর মূল্যবান বক্তৃতা উপস্থাপন করেন ফয়েজনূর নাহার মিলনায়তনে জন কোলাহল থেমে এক প্রশান্তির আবেশে ছড়িয়ে য়ায় আর তিনি বলতে থাকেন সাহিত্য চর্চার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং প্রত্যেক বাক্যের মধ্যে যে কথাগুলিকে আন্ডার লাইন করা যায় তা হলো– ‘সকল ভাইদের কাছে আমার আকুল অনুরোধ, আপনাদের সবার ঘরের মেয়েগুলিকে মেধা বিকশিত করার সুযোগ দিন, যদি আপনার স্ত্রী, ভগিনী, কন্যার গৃহস্থালি কাজের জন্য লেখালেখির কাজ থেমে যায়, তাকে গৃহস্থালি কাজে সাহায্য করে লেখালেখির সময়টা বের করে দিন এ আপনাদের নিকট আমার অনুরোধ। আমি লেখালেখি শব্দটায় একটা উদাহরণ দিয়েছি মাত্র প্রিয় ভাইগুলি আমার, নারী পুরুষ সবাই কোনো না কোনো মেধা নিয়ে অবশ্যই জন্মগ্রহণ করেন। আমরা একে অপরকে সেটা বিকশিত করার সুযোগ দিলেই সকল বৈষম্যের সমাধান আসবেই।’

প্রফেসর রীতাদত্ত, মাইক্রোফোনের সামনে যখনি দাঁড়ান ভেতরের এক বিবেকসত্তা মাথা উঁচু করে স্যালুট জানাই প্রতিবার। যখন উনি মেয়েদের নিয়ে কথা বলেনতাঁর বুকের ভেতর জ্বলে নারী অগ্রগতি প্রচেষ্টার এক অনির্বাণ শিখা। চট্টগ্রাম একাডেমিতে একজন উচ্চ শিক্ষিত সুপ্রতিষ্ঠিত অধ্যাপক জননী যেন প্রতিনিয়ত আকন্ঠ মুগ্ধতার শাসনে বলে যানআমার মেয়েগুলো তোমরা পিছিয়ে থাকলে কিভাবে হবে? দশভুজা হয়ে সংসার সামলিয়ে জ্ঞানচর্চা করে যেতেই হবে। বই পড়তেই হবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে। পত্রিকা পড়বে, আর প্রজন্মের হাতে তুলে দিবে নিজেদের আত্মবিকশিত করার আলোকশিখা এক একটা ভালো বই। একটা মেয়ে যখন পৃথিবী রক্ষার প্রজন্ম নিয়ে আসে এ সমাজে। এই সমাজেরই আমরা অনেকেই এ আধুনিক ডিজিটাল যুগে থেকেও সে নারীর শারীরিক মানসিক কষ্ট বলিদান কয়দিন মনে রাখি? নারীত্বের অসম্মানে সমাজ অভিশপ্ত হয়। নারীপুরুষের সম্মিলিত মহৎ জ্ঞানচর্চায় গৃহ থেকে বিশ্বে লক্ষ্মী সমৃদ্ধ হয়। মেয়েদের সংস্কৃতি, শিক্ষার উচ্চ পর্যায়ে স্থান এবং দেশ গড়ার কারিগর তৈরিতে রীতা দত্ত নিরলস মেধা শক্তি বিতরণ করে যাচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফার্মেসিতে দক্ষ ফার্মাসিস্ট চাই
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে লেভেল-এ ক্রিকেট কোচিং কোর্স আজ শুরু