লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ট্রমা সেন্টারে সংযোজন করা হয়েছে নতুন ডিজিটাল এক্স–রে মেশিনসহ আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি। এতে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া হবে অনেক সহজ, দ্রুত ও নির্ভুল। আর বাড়বে স্বাস্থ্যসেবার মান। এই উদ্যোগের ফলে উপজেলার সাধারণ মানুষ এখন থেকে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
জানা যায়, ১৯৯৫ সালে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৪ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে জনবল ঘাটতির শিকার এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন গড়ে ৮০জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকছেন, যা এর ধারণক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে, আউটডোর বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন হাজারের অধিক রোগী। মৌসুমী জ্বর, সর্দি–কাশি, ডায়রিয়া, ত্বকের রোগ, শ্বাসকষ্ট, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসকদের ওপর পড়েছে ব্যাপক চাপ। তবুও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অতিরিক্ত দায়িত্বের মাঝেও আন্তরিকতার সাথে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নতুন সংযোজিত যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে নতুন ডিজিটাল এক্স–রে মেশিন, হরমোন অ্যানালাইজার মেশিন ও অত্যাধুনিক ডেন্টাল চেয়ার। ডিজিটাল এক্স–রে মেশিনের মাধ্যমে ২০ ধরনের পরীক্ষা করা যাবে। হরমোন অ্যানালাইজার মেশিন দিয়ে থাইরয়েড পরীক্ষা, ডায়াবেটিক পরীক্ষা, কার্ডিয়াক পরীক্ষা, হরমোন পরীক্ষাসহ অন্যান্য গ্রন্থি পরীক্ষা করা যাবে। দন্ত ইউনিটে দাঁতের সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি কম্পোজিট, সিলভার ও জি–আই ফিলিং, স্কেলিং, টুথ এক্সট্রাকশনসহ ধাপে ধাপে রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্টও প্রদান করা হবে। এছাড়া নারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে হাসপাতালে নতুন নামাজঘরও সংযোজন করা হয়েছে। যা নারীরা ব্যবহারের মাধ্যমে মানসিক ও আধ্যাত্মিক শান্তি অর্জন করতে পারবেন।
গত ১৩ নভেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ট্রমা সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ডিজিটাল এক্স–রে মেশিন ও হরমোন অ্যানালাইজার মেশিন দিয়ে রোগীদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া ডেন্টাল ইউনিটে নতুন আধুনিক চেয়ারে বসে রোগীরা চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন।
এদিকে ১২ নভেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ট্রমা সেন্টারে নতুন ডিজিটাল এক্স–রে মেশিনসহ আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি এবং হাসপাতালের ভেতর নারীদের জন্য নতুন নামাজঘর পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় সাথে ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম ছলিম উদ্দিন খোকন চৌধুরী, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আ.ন.ম নোমান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নুসরাত জাহান, ডা. সুমন চৌধুরী, পদুয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর হামিদুর রহমান, পদুয়া ইউনিয়ন যুব বিভাগের সভাপতি জিয়াউল হক ও নুরুল ইসলাম সিকদার প্রমুখ।
চিকিৎসা নিতে আসা ফয়েজ উদ্দিন জানান, হাসপাতালে নতুন জিডিটাল এক্স–রে মেশিনসহ আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংযোজন হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন সরকারি হাসপাতালে অল্প খরচে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিতে পারবেন। মরিয়ম খাতুন নামে এক বৃদ্ধা জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দাঁতের সমস্যায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে ডাক্তারের আন্তরিকতা ও চিকিৎসাসেবা পেয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, নতুন ডিজিটাল এক্স–রে মেশিনের মাধ্যমে রোগীরা এখন থেকে আরো দ্রুত, নির্ভুল ও উন্নতমানের এক্স–রে সেবা পাবেন। সরকারি খরচে অল্প সময়ে মানসম্পন্ন বিভিন্ন এক্স–রে করা যাবে এই ডিজিটাল মেশিনে। গরীব রোগী, বিশেষ করে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ বা যক্ষ্মা রোগীদের জন্য এক্স–রে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হবে। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে নতুন হরমোন অ্যানালাইজার মেশিনে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগুলোও করা যাবে। এখন থেকে সরকারি হাসপাতালেই আধুনিক দন্ত চিকিৎসার সকল সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের উপর আস্থা রেখে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া আগে হাসপাতালে আসা নারী রোগী ও তাদের স্বজনদের নামাজ আদায়ের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সম্প্রতি নতুন নামাজঘর সংযোজন করায় এখন থেকে নারীরা নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন।











