একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বানচাল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তারা পরাজিত শক্তি, তারা নির্বাচন চায় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে গত ১৭ বছর ধরে আমরা রাজপথে ত্যাগ স্বীকার করেছি। কিন্তু দেশবিরোধী মহল সেই অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। তাই আপনাদের ধানের শীষের বিজয়ের জন্য জনগণের দোরগোড়ায় যেতে হবে, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী মরহুম আলহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে সারা দেশে ধানের শীষের জোয়ার উঠেছে। আগামী দিনে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে সারাদেশে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও শিক্ষা সেবা নিশ্চিত করা হবে এবং ১৮ মাসে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষকে অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের মানুষের কল্যাণে ৩১ দফার একটি বিশাল কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন, যাতে সবাই উপকৃত হতে পারে। একটি গোষ্ঠী দেশের অর্থনীতিকে তলানিতে ঠেলে দিচ্ছে, ধানের শীষের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। মরহুম জাফরুল ইসলামকে স্মরণ করে তিনি বলেন, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন একজন সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ। মৃত্যুর আগের দিনও তিনি দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দল ও জনগণের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ ভালোবাসা। তিনি ছিলেন বাঁশখালীর উন্নয়নের রূপকার। আগামীর বাঁশখালী এগিয়ে যাবে তাঁরই উত্তরসুরী মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পার নেতৃত্বে। বাঁশখালী থেকে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরীকে সংসদে পাঠাতে পারলে মরহুম জাফরুল ইসলামের আত্মাও শান্তি পাবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো দেশ চলতে পারে না। ১৪ মাস ধরে একটি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে বাংলাদেশ চলছে। যার ফলে সবকিছু স্থবির, মিল–কারখানা বন্ধ, অর্থনীতি নিম্নগামী, বিনিয়োগ বন্ধ, এবং প্রতিদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। অতএব, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবশ্যই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এবং দেশে একটি নির্বাচিত সংসদ ও সরকার গঠন করতে হবে, যা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
স্মরণ সভার আগে নেতৃবৃন্দ বাঁশখালীর গুণাগরিতে মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর কবর জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মোনাজাত করেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি আয়োজিত বাঁশখালীর আসন থেকে ৪ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বন পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা মরহুমের বড় সন্তান ও বিএনপি দক্ষিণ জেলার সিনিয়র সদস্য জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব ইদ্রিস মিয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালী আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী, আলহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা। অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব এনামুল হক এনাম, সিনিয়র এডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোছাইনী, জেলা পিপি এডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর কন্যা ফারহানা ইয়াসমিন চৌধুরী আঁখি।
এডভোকেট শওকত ওসমান ও এডভোকেট নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন ও আলোচনায় অংশ নেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বুলবুল, বিএনপি নেতা সাওয়াত জামান দুলাল, কালীপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাহারছড়ার সাবেক চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ লোকমান, বৈলছড়ির সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিল, ছনুয়ার সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী, পৌরসভা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক রাসেল ইকবাল মিয়া, শীলকুপের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আকতার হোসেন, মো. মহসিন প্রমুখ। এছাড়া জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বাঁশখালীর উন্নয়নের রূপকার ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ভূমিকা ছিল অনন্য। তিনি ছিলেন ন্যায়–অন্যায়ের প্রশ্নে আপসহীন এক নেতা। তাঁর স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদেরকে সংগঠিত থাকতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাফরুল পুত্র মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে নির্বাচিত করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন এ প্রত্যাশা রাখছি।
মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা বলেন, আমার পিতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী শুধু একজন নেতা নন, তিনি ছিলেন দক্ষ সংগঠক। তিনি ছিলেন বাঁশখালীর মাটি ও মানুষের নেতা। তার নেতৃত্বে দক্ষিণ জেলা বিএনপি সুসংগঠিত হয়েছিল। শত শত নেতাকর্মী গড়ে উঠেছে তার হাত ধরে। অসুস্থতা নিয়েও তিনি রাজপথে থেকে দলের কর্মসূচি পালন করেছেন। আমি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সন্তান হিসেবে সব সময় বাঁশখালীবাসীর পাশে থাকবো। আপনারা সবাই আমার বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করবেন।
উল্লেখ্য, তৎকালীন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাইয়ের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বাঁশখালীর ইতিহাসে প্রথম বনও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এদিকে মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শোডাউনে পরিণত হয়।












